বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক : মহামারির বিপর্যয় এখনও কাটিয়ে ওঠা যায়নি, চোখ রাঙাচ্ছে করোনার সবচেয়ে সংক্রামক ধরন ডেল্টা, এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের ২৪৫ তম স্বাধীনতা বার্ষিকী উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ।
একসময় ব্রিটেনের রাজতন্ত্রের অধীনে থাকা যুক্তরাষ্ট্র ১৭৭৬ সালের ০৪ জুলাই স্বাধীনতা লাভ করে। সেই থেকে এই দিনটিকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে উদযাপন করে আসছে মার্কিন জনগণ।
করোনা মহামারি শুরুর আগ পর্যন্ত প্রতি বছর খুব ধুমধামের সঙ্গে এই দিনটি পালন করা হতো যুক্তরাষ্ট্রে। দেশজুড়ে আতশবাজি, আনন্দ র্যাসলীর পাশাপাশি এই দিন বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, লং ড্রাইভসহ বিভিন্নভাবে সরকারী ছুটির এই দিনটিকে উপভোগ করতেন মানুষজন।
রাজধানী ওয়াশিংটনসহ দেশজুড়ে বিপুল পরিমাণ আতশবাজি ফোটানো হতো। স্বাধীনতা দিবসের রাতে আলোয় উজ্জল হয়ে উঠত যুক্তরাষ্ট্রের আকাশ।
বিভিন্ন মজার প্রতিযোগিতাও আয়োজন করা হতো এ উপলক্ষ্যে। তার একটি হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে ঐতিহ্যবাহী খাবার হটডগ খাওয়ার প্রতিযোগিতা। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে তো বটেই, নিউইয়র্কের কনি দ্বীপে এই দিন রীতিমত জাতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হতো এই প্রতিযোগিতা। দেশের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের হটডগ চ্যাম্পিয়নরা এই উপলক্ষ্যে প্রতিবছর কনি দ্বীপে জড়ো হতেন।
মহামারির কারণে গত বছর এসবের প্রায় কিছুই হয়নি। করোনায় প্রতিদিন হাজার হাজার আক্রান্ত ও শত শত মৃত্যুর পরিসংখ্যান নিয়ে গত বছর এই সময়ে ঘরবন্দি অবস্থাতেই থাকতে হয়েছে দেশটির লোকজনের।
তবে গত ছয়মাসে ব্যাপক টিকাদান অভিযানের ফলে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে দেশটিতে। এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রাপ্ত বয়স্ক জনগণের অর্ধেকেরও বেশি মানুষকে টিকার আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
ফলে, চলতি বছর সামাজিক দূরত্ব যতদূর সম্ভব বজায় রেখে জনগণকে স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের অনুমতি দিয়েছে মার্কিন সরকার। দেশটির সরকার প্রধান জো বাইডেন এ উপলক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যকর্মী ও বিভিন্ন যুদ্ধে নিহত মার্কিন সেনাদের আত্মীয় স্বজনদের হোয়াইট হাউসে নিমন্ত্রণ করেছেন।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে দেশজুড়ে আতশবাজি ফোটানো মার্কিন সংস্কৃতির অংশ। তবে সবচেয়ে বড় আতবাজির প্রদর্শনী হয় রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির ন্যাশনাল মল এবং নিউইয়র্কের ইস্ট রিভার এলাকায়।
চলতি বছরও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না বলে বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন মার্কিন আতশবাজি ব্যবসায়ীদের সংগঠন আমেরিকান পাইরোটেকনিক অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট জুলি হেকম্যান।
এছাড়া অন্যান্য বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলের সামনে দিয়ে যে শোভাযাত্রা হতো, তা এ বছরও হবে। পাশাপাশি, সন্ধ্যার পর ক্যাপিটল হিলের লিংকন মেমোরিয়াল রিফ্লেক্টিং পুল এলাকায় ১৭ মিনিট ধরে আতশবাজি ফোটানো হবে বলেও জানিয়েছেন জুলি হেকম্যান।
চলতি বছর স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে লংড্রাইভের প্রস্তুতি নিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের অনেকেই। এক বার্তায় আমেরিকান অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, চলতি বছর ৪ কোটি ৩৬ লাখ মানুষ লংড্রাইভে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন যা ২০১৯ সালের চেয়ে ৫ শতাংশ বেশি।
তবে সবটাই যে আনন্দের- এমন নয়। প্রদীপের ঠিক নিচেই যেমন থাকে অন্ধকার, এখানেও ব্যাপারটি অনেকটা তেমনি। করোনায় এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে মারা গেছেন ছয় লাখেরও বেশি মানুষ। তাদের আত্মীয়-স্বজনরা স্বাভাবিকভাবেই বিষন্ন।
এছাড়া গত কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রে আভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা, ওহিওসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে পরপর বন্দুক হামলা চালিয়েছে দুষ্কৃতিকারীরা, যাতে প্রাণ গেছে অনেক মানুষের।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি থেকে ইতোমধ্যে স্বাধীনতা দিবসে যেন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনো বিচ্যুতি না ঘটে- সেজন্য দেশের পুলিশ বাহিনীকে সচেতন থাকার নির্দেশ জারি করা হয়েছে।
তবে তারপরও যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ মানুষ পূর্বে বছরসমূহের মতো এ বছরের স্বাধীনতা দিবসকে বরণ করে নিতে আগ্রহী।
নিউইয়র্ক রাজ্যের ব্রুকলিন নিবাসী কিশোরী আলেক্সান্দ্রা ম্যাগিডফ (১২) বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, তার পরিবারের আত্মীয়স্বজনদের অধিকাংশই থাকে নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যে।
স্বাধীনতা দিবসে তার পরিকল্পনা কী, জানতে চাইলে উত্তরে আলেক্সান্দ্রা ম্যাগিডফ বলেছে, ‘বাবা-মার সঙ্গে নিউজার্সি যাব, আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা হবে, প্রচুর হটডগ-বার্গার-আইসক্রিম খাব। আমি খুবই উত্তেজিত স্বাধীনতা দিবস নিয়ে।’