বঙ্গ নিউজ বিডি প্রতিনিধি : দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত ‘আলু উৎসব’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) আলু চাষীদের স্বার্থে ডিসেম্বর পর্যন্ত কোল্ড স্টোরেজে পুরাতন আলু সংরক্ষণের আহ্বান জানান। তিনি বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশনকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করার অনুরোধ করেন।
বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশন আয়োজিত এ উৎসবে উপদেষ্টা বলেন, এ বছর দেশে রেকর্ড পরিমাণ ১ কোটি ১২ লাখ মেট্রিক টনের বেশি আলু উৎপাদন হয়েছে, যা জাতীয় চাহিদার তুলনায় প্রায় ২২ লাখ মেট্রিক টন উদ্বৃত্ত।
তিনি জানান, ২০২৫ সালে আলু উৎপাদন খরচ কেজিপ্রতি ১৪–১৭ টাকা হলেও, হিমাগারে সংরক্ষণ, পরিবহন, বস্তা, লেবার ও অন্যান্য খরচ যোগ করলে হিমাগার গেটে আলুর খরচ দাঁড়ায় ২০–২৫ টাকা। অথচ চাষীরা কোল্ড স্টোরেজ গেটে ৮–১৬ টাকা দরে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে তারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
উপদেষ্টা বলেন,
“কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবং বাজার স্বাভাবিক রাখতে ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরাতন আলু সংরক্ষণ প্রয়োজন। এতে কোল্ড স্টোরেজ মালিকেরা সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কৃষকরা উপকৃত হবেন। নতুন আলু বাজারে আসতে এবার ১৫ দিন বেশি সময় লাগবে, তাই কৃষকের স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত।”
তিনি কেজি প্রতি আলু উৎপাদন খরচ কমাতে প্রযুক্তি, যান্ত্রিকীকরণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
আলু প্রক্রিয়াজাতকরণে বড় সম্ভাবনা
উপদেষ্টা জানান, দেশে প্রচুর আলু উৎপাদন হলেও প্রক্রিয়াজাত শিল্পে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। বর্তমানে দেশে মাত্র ২% আলু প্রক্রিয়াজাত হয়—অন্যদিকে বিশ্বে এ হার ৭%।
তিনি বলেন, “প্রক্রিয়াজাতকরণ বাড়াতে হলে উপযোগী আলুর জাত নির্বাচন ও সেই অনুযায়ী চাষাবাদ বাড়াতে হবে।”
আমদানিকৃত আলু বীজের প্যাকেটে দাম উল্লেখ বাধ্যতামূলক করার কথাও তিনি উল্লেখ করেন, যাতে কৃষক প্রতারিত না হয়।
পেঁয়াজের বাজার নিয়ে কঠোর অবস্থান
বক্তব্যে উপদেষ্টা পেঁয়াজের বাজার পরিস্থিতি নিয়েও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন,
“পর্যাপ্ত উৎপাদন থাকা সত্ত্বেও বাজারে কারসাজির কারণে একদিনে পেঁয়াজের দাম ৩৫ টাকা বেড়ে গেছে। ভোক্তাদের স্বার্থে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিতে হয়েছে। বাজারে দাম ৭০–৮০ টাকার মধ্যে না আসা পর্যন্ত আমদানি চালু থাকবে।”
উৎসবে দেশের-বিদেশের বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণ
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ.কে. ফজলুল হক, নেদারল্যান্ডস-এর রাষ্ট্রদূত Joris Van Bommel, এবং চীনের Hangzhou Fima Expo Co. Ltd.-এর জেনারেল ম্যানেজার Tony Lv।
উৎসবে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত হিমাগার মালিক, আলু চাষী, ব্যবসায়িক নেতা ও উদ্যোক্তারা অংশ নেন।
অনুষ্ঠান শেষে উপদেষ্টা আলু উৎসব উপলক্ষে স্থাপিত বিভিন্ন প্রদর্শনী স্টল পরিদর্শন করেন।