বঙ্গ নিউজ বিডি প্রতিনিধি : সরকারি চাকরিজীবনের শেষে যেমন বিদায়ী সংবর্ধনা, এককালীন আর্থিক সুবিধা ও পেনশন থাকে, ঠিক তেমনটি হয় না যারা আল্লাহর ঘর মসজিদে নিষ্ঠার সঙ্গে খেদমত করে যান—যেমন খতিব ও মুয়াজ্জিনগণ। তবে এর ব্যতিক্রম ঘটেছে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার বড় শালঘর ইউনিয়নে।
একই মসজিদে ৩৭ বছর টানা মুয়াজ্জিন হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ক্বারী মোহাম্মদ আমির হোসেন হুজুরকে রাজকীয় বিদায় জানিয়ে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এলাকাবাসী ও মুসুল্লিরা।
৩৭ বছরের নিষ্ঠার স্বীকৃতি
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) জুমার নামাজের পূর্বে কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার ১নং বড় শালঘর ইউনিয়নের বড় শালঘর মধ্যপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় এ ব্যতিক্রমী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান।
জানা যায়, ক্বারী মোহাম্মদ আমির হোসেন ১৯৮৮ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত একটানা ৩৭ বছর মুয়াজ্জিন হিসেবে খেদমত করেছেন। বয়সজনিত শারীরিক অসুস্থতা এবং চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি এবার অবসর গ্রহণ করেন।
নগদ অর্থসহ রাজকীয় সংবর্ধনা
তার এই দীর্ঘ ও সৎ খেদমতের স্বীকৃতিস্বরূপ মসজিদ পরিচালনা কমিটি, স্থানীয় মুসল্লি ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে আয়োজিত সংবর্ধনায় ক্বারী সাহেবকে প্রদান করা হয় নগদ ৯,৫০,০৩৭ টাকা এবং তার পরিবারকে দেওয়া হয় বিভিন্ন উপহারসামগ্রী।
জুমার নামাজ শেষে তাকে এক রাজকীয় শোভাযাত্রার মাধ্যমে ফুলে ফুলে বরণ করে নেয়া হয়। পিকআপ, বাইক, সিএনজি, অটোরিকশা এবং একটি ফুলসজ্জিত ঘোড়ার গাড়ির বহর তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনায় বড় শালঘর গ্রাম প্রদক্ষিণ করিয়ে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শিদলাই গ্রামের নিজ বাড়িতে পৌঁছে দেয়।
উপস্থিতি ও বক্তব্য
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দুলাল জমদ্দার এবং সঞ্চালনায় ছিলেন রাশেদুল হক রাসেল। কুরআন তেলাওয়াত করেন হাফেজ মাহফুজুর রহমান এবং ইসলামী সংগীত পরিবেশন করেন মাওলানা মোবারক হুসাইন।
এতে বক্তব্য রাখেন:
মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি আজিজুল হক বাচ্চু মাস্টার
বিশিষ্ট সমাজসেবক মাসুম মুন্সী
এমরান
ক্বারী সাহেবের পরিবারের পক্ষে ক্বারী আবু বকর প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, “সরকারি কিংবা বেসরকারি চাকরিজীবীদের অবসরকালে যে সম্মান ও সুবিধা থাকে, তা মসজিদের খতিব-মুয়াজ্জিনদের জন্য সাধারণত থাকে না। কিন্তু আজকের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ভবিষ্যতে অন্য মসজিদগুলোর জন্য একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”
আবেগাপ্লুত মুয়াজ্জিন সাহেবের প্রতিক্রিয়া
মুয়াজ্জিন ক্বারী মোহাম্মদ আমির হোসেন হুজুর সম্মাননা পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এবং বলেন,
“আমি কখনও কল্পনা করিনি, আমার এ খেদমতের এমন সম্মানজনক বিদায় হবে। আলহামদুলিল্লাহ! আমি এলাকাবাসী, মসজিদ কমিটি ও মুসুল্লিদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ।”
সমাপনী বার্তা
এলাকাবাসীর এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ শুধু একজন মুয়াজ্জিনের প্রতি সম্মানই জানায়নি, বরং পুরো দেশের জন্য একটি নতুন উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। আল্লাহর ঘরে খেদমতে নিয়োজিত মানুষদের মূল্যায়নের এই ধারা ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃত হোক—এই প্রার্থনা সকলের।