বঙ্গ নিউজ বিডি প্রতিনিধি : মহান বিজয় দিবস ২০২৫ উদ্যাপনকে ঘিরে দেশজুড়ে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। এবারের উদ্যাপনে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হিসেবে যুক্ত হচ্ছে বিশ্বরেকর্ড গড়ার লক্ষ্য—৫৪টি জাতীয় পতাকা হাতে ৫৪ জন প্যারাট্রুপারের স্কাইডাইভিং। স্বাধীনতার ৫৪ বছরকে স্মরণীয় করে রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর যৌথ উদ্যোগে এই বিশেষ আয়োজন করা হচ্ছে। এটি হবে বিশ্বের ইতিহাসে সর্বাধিক পতাকা হাতে প্যারাস্যুট জাম্প, যা গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লেখাবে বলে আশা করছে সরকার।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের সভায় এবারের বিজয় দিবসের রাষ্ট্রীয় আয়োজন, কর্মসূচি ও নিরাপত্তা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজউদ্দিন মিয়া, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
ঢাকায় মহড়া, এয়ার শো ও বিশ্বরেকর্ড–সৃষ্টি অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি
বিজয় দিবসের দিন সকাল ১১টা থেকে ঢাকার তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে তিন বাহিনীর পৃথক ফ্লাই-পাস্ট মহড়া ও বিশেষ ব্যান্ড-শো অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে ‘টিম বাংলাদেশ’-এর ৫৪ জন প্যারাট্রুপার জাতীয় পতাকা হাতে স্কাইডাইভিং করবেন। এই অনুষ্ঠান জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী—পুলিশ, বিজিবি, আনসার বাহিনীও সারাদেশে ব্যান্ড-শো ও বিভিন্ন প্রদর্শনী আয়োজন করবে।
সারা দেশে বিজয় মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতা
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশের সকল জেলা ও উপজেলায় তিন দিনব্যাপী বিজয় মেলা অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের জন্য রচনা, আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজনও থাকবে।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ১৫ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিকেল ৩টায় আকরোবেটিক শো এবং সন্ধ্যা ৬টায় প্রদর্শিত হবে নাট্যকর্ম ‘জেনারেল ওসমানী’।
১৬ ডিসেম্বর একই স্থানে বিকেল ৩টা থেকে পরিবেশিত হবে বিজয় দিবসের গান। সারাদেশের ৬৪ জেলায় একযোগে নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা গাইবেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান।
বন্দর, ঘাট ও নৌযান জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত
বিজয় দিবসে সকাল ৯টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত চট্টগ্রাম, খুলনা, মংলা ও পায়রা বন্দর এবং ঢাকা, পাগলা ও বরিশালের বিভিন্ন ঘাটে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের জাহাজসমূহ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
বিজয় দিবসে বিশেষ ক্রোড়পত্র ও আলোকসজ্জা
তথ্য মন্ত্রণালয় দিবসটি উপলক্ষে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। বিধি অনুযায়ী, সকল সরকারি-বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, ভবন ও স্থাপনায় আলোকসজ্জা এবং ৩১ বার তোপধ্বনি প্রদান করা হবে।
সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ অনুষ্ঠান এবং জেলা-উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনার আয়োজন করা হবে।
বিনামূল্যে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী
ঢাকাসহ সারাদেশের সিনেমা হলে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিনা টিকেটে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে। একইভাবে বিভিন্ন মিলনায়তন ও উন্মুক্ত স্থানে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী হবে।
বিজয় উদ্যাপনে উচ্ছ্বাস—এক অনন্য আয়োজনের প্রত্যাশা
বৈঠক শেষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন—
“এবার বিজয় উদ্যাপনে ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি নির্বিশেষে সকল মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ব্যাপক আয়োজন করা হয়েছে। পুরো জাতি এবার একসঙ্গে বিজয়ের আনন্দে অংশ নেবে।”
সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন—
“চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের প্রেরণার মূলেই ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাহী গান। এবারের বিজয় দিবসের এয়ার শো ও ৫৪ পতাকার প্যারাস্যুট জাম্প নতুন প্রজন্মের কাছে বিজয়ের গৌরব আরও শক্তভাবে তুলে ধরবে।”
নতুন প্রজন্ম ও জাতির জন্য স্মরণীয় এক বিজয় দিবস
একাধিক আলো ছড়ানো আয়োজনে এবারের বিজয় দিবস হতে যাচ্ছে ব্যতিক্রমী, ঐতিহাসিক ও স্মরণীয়। বিশেষ করে বিশ্বরেকর্ড গড়ার লক্ষ্যে ৫৪ প্যারাট্রুপারের পতাকা-জাম্প দেশকে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে নতুন গৌরবে তুলে ধরবে।