নিজস্ব প্রতিনিধি : বরিশাল জেলার গৌরনদী থানার সুন্দরদী এলাকায় একটি বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে চলমান মামলার মধ্যেই সম্প্রতি ওই জমিতে জোরপূর্বক দখল ও ধর্মীয় উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে সরস্বতী দাস ও তার ছেলে অনুপ দাসের বিরুদ্ধে।
ঘটনাস্থল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে কেশব দাস ও সরস্বতী দাস তাদের স্বামীসহ স্বেচ্ছায় উক্ত জমিটি বিক্রি করেন। বিক্রয়ের পর তারা নিজ হাতে ক্রয়কৃত জমি হস্তান্তর করে অন্য এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। দীর্ঘদিন পর তারা পুনরায় এসে দাবি করতে থাকেন যে, তারা নাকি ওই জমি বিক্রি করেননি এবং সেখানে তাদের আরও জমি রয়েছে।
এই বিষয়ে স্থানীয় সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে অভিযোগ করা হলে তদন্ত শেষে রায় দেওয়া হয় যে, উক্ত জমি বর্তমানে মোস্তফা মুনশির দখলে আছে। কিন্তু সরস্বতী দাস ও তার পরিবার সেই প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত মানেননি এবং বিভিন্ন মিথ্যা মামলা করে হয়রানির পথ বেছে নিয়েছেন।
উক্ত জমি বর্তমানে আদালতের মামলার অধীনে (বিরোধপূর্ণ) রয়েছে। আইন অনুযায়ী, আদালতের রায় না হওয়া পর্যন্ত কোনো পক্ষই ওই জমিতে নির্মাণ, দখল বা কোনো প্রকার কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারেন না।
তবে, ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে সরস্বতী দাসের পক্ষ থেকে জোরপূর্বক ওই জমিতে টিনের ছাউনি দিয়ে ছোট একটি ঘর নির্মাণের চেষ্টা করা হয়। বাধা দিতে গেলে তাদের লোকজন হামলার চেষ্টা করে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (GD) করা হয়।
থানা ও আদালত উভয় পক্ষকেই স্পষ্টভাবে জানিয়েছে — আদালতের রায় না আসা পর্যন্ত কেউ ওই জমিতে কোনো কাজ করতে পারবে না। কিন্তু সরস্বতী দাস ও তার ছেলে অনুপ দাস ২৬ অক্টোবর দুপুরের পর হঠাৎ করে উক্ত জমিতে কালীমূর্তি এনে রাখেন এবং ভিডিও ধারণ শুরু করেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, তারা জমি দখলের উদ্দেশ্যে ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। কালীপূজা সাধারণত ২০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে ২৬ অক্টোবর আবার নতুন করে পূজার আয়োজন কেন করা হলো — সেটি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এলাকায় বহুদিন ধরে বিদ্যমান ঐতিহ্যবাহী কালীমন্দির থাকা সত্ত্বেও তারা কেন নতুন করে বিরোধপূর্ণ জমিতে মূর্তি আনলেন, সেটিও সন্দেহজনক। স্থানীয় হিন্দু সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা এই বিষয়ে কিছুই জানেন না এবং ওই স্থানে কখনো কোনো মন্দির ছিল না।
যদিও সরস্বতী দাসের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে এটি তাদের “পারিবারিক মন্দির”, কিন্তু স্থানীয় হিন্দু সমাজ ও প্রতিবেশীরা বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে জানিয়েছেন। এতে স্পষ্ট হয় যে, ধর্মকে হাতিয়ার করে জনমনে বিভ্রান্তি ও উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে স্থানীয়রা বলেন, মোস্তফা মুনশি একজন সৎ, ন্যায়পরায়ণ ও সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি, যিনি বহু বছর ধরে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন। হিন্দু সমাজের বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তাকেও নিয়মিত আমন্ত্রণ জানানো হয়।
অতএব, এই ঘটনাটি ধর্মীয় বিভাজনের নয় বরং একটি পরিকল্পিত জমি দখল ও আইন অমান্য করার অপচেষ্টা, যার পেছনে ব্যক্তিগত স্বার্থ জড়িত।
স্থানীয় সচেতন নাগরিক ও এলাকাবাসী রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন — এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে সরস্বতী দাস, অনুপ দাস ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক,
এবং মোস্তফা মুনশির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক।