বঙ্গ নিউজ বিডি প্রতিনিধি : ১৬ বছরের অন্ধকার অধ্যায়ের বর্ণনা দিয়ে মানবাধিকার সুরক্ষায় জাতীয় ঐক্যের আহ্বান
বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, হেফাজতে মৃত্যু ও মিথ্যা মামলার সবচেয়ে বড় শিকার বিএনপির নেতাকর্মীরাই— এমন দাবি তুলে ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, গত ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশ এক ভয়ংকর অন্ধকারের নিচে দমবন্ধ অবস্থায় ছিল। বুধবার তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত দীর্ঘ রাজনৈতিক ও মানবাধিকারভিত্তিক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, “১৬টা বছর ধরে বাংলাদেশ যেন একটা কালো মেঘের নিচে চাপা পড়ে ছিল। ভয়, নির্যাতন, গুম— সবকিছুই এ দেশের সাধারণ মানুষের নিত্যদিনের বাস্তবতায় পরিণত হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি ভুগেছে বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীরা, আর তাদের মধ্যে বিএনপির নেতাকর্মীরাই ছিলেন সবচেয়ে বড় টার্গেট।”
‘রাতের অন্ধকারে দরজায় কড়া, মিথ্যা মামলা— ছিল নিত্যদিনের আতঙ্ক’
তারেক রহমান বলেন, যারা অবৈধ ও কর্তৃত্ববাদী সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন, তাদের জীবনে রাত্রির ঘুমও ছিল আতঙ্কে ভরা। রাতের বেলা দরজায় কড়া, গুমের ভয়, মিথ্যা মামলা— সবকিছুই ছিল রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত ভয়-তন্ত্রের অংশ।
তিনি উল্লেখ করেন যে BNP-র হাজারো পরিবার বছরের পর বছর অপেক্ষা করেছে গুম হওয়া প্রিয়জনদের জন্য— যাদের অনেকেই আর কখনো ফিরে আসেননি।
‘অত্যাচারের শিকার শুধু বিএনপি নয়; সাংবাদিক, ছাত্র, লেখক— সকলেই’
তারেক রহমান বলেন, এই অন্ধকার যুগ শুধু বিএনপির ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। সাংবাদিক, লেখক, ছাত্র, পথচারীসহ সাধারণ মানুষও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছেন। মতপ্রকাশের অধিকার থেকে শুরু করে নাগরিক জীবনের স্বাভাবিক নিরাপত্তা পর্যন্ত— সবই ছিল হুমকির মুখে।
‘আমার কথা বলার অধিকারও ২০১৫ সালে কেড়ে নেওয়া হয়’
বিবৃতিতে তিনি জানান, সরকারি নির্দেশনার কারণে ২০১৫ সাল থেকে তাঁর কোনো বক্তব্য দেশে প্রকাশ করা নিষিদ্ধ ছিল। দেশের ভেতর তাঁর বক্তব্য পত্রিকা, টেলিভিশন বা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করা যেত না।
তবুও তিনি দাবি করেন, “এই নীরবতার মাঝেও আমি সত্য, গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার নিয়ে লড়াই চালিয়ে গেছি। সত্যের স্পিরিটকে চাপিয়ে দেওয়া যায় না।”
খালেদা জিয়াকে প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে বর্ণনা
এই কঠিন সময়ের সবচেয়ে বড় প্রতীক ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া— মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, তাঁর মা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন, মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি ছিলেন এবং শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারপরও তিনি গণতান্ত্রিক আদর্শ থেকে সরে আসেননি।
“তিনি আমাদের শিখিয়েছেন— যে অন্যায় আমরা সহ্য করেছি, তা যেন আর কারো জীবনে না আসে,”— যোগ করেন তারেক।
‘আমাদের পরিবারও ছিল লক্ষ্যবস্তু’
তারেক রহমান বলেন, তাঁর পরিবারও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের শিকার। একদিকে তাঁকে নিজ হাতে জেলে পাঠানোর যন্ত্রণা সহ্য করেছেন খালেদা জিয়া; অন্যদিকে তাঁর আরেক ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকে হারাতে হয়েছে।
তিনি বলেন— “বাংলাদেশের হাজারো পরিবারের মতো আমাদের পরিবারও নির্যাতনের লক্ষ্যবস্তু ছিল।”
‘কষ্ট মানুষকে তিক্ত করে না; আরও মহান করে তোলে’
তারেক রহমান বলেন, দীর্ঘ দুঃসহ সময় তার ও তাঁর পরিবারের মানসিক শক্তিকে আরও দৃঢ় করেছে। এই কষ্ট থেকেই উঠে এসেছে গণতন্ত্র, ন্যায় ও মানবাধিকারের নতুন অঙ্গীকার।
মানবাধিকার দিবসে গণ-অধিকারের লড়াইয়ে জাতীয় ঐক্যের ডাক
১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে তাঁরেক রহমান বলেন—
“মানবাধিকারই মানুষের দৈনন্দিন বেঁচে থাকার মৌলিক শর্ত। আমরা আবরার ফাহাদ, মুশতাক আহমেদ, ইলিয়াস আলী, সাগর-রুনি, সাজেদুল ইসলাম সুমনসহ অসংখ্য নিখোঁজ ও নিহত মানুষের গল্প মনে রাখি— যেন ভবিষ্যতে দায়মুক্তি আর ফিরে না আসে।”
‘বিএনপি প্রতিশোধের রাজনীতি করে না— আমরা সমাধানের পথে বিশ্বাসী’
তিনি বলেন, বিএনপি সংঘাত বা প্রতিশোধের পথে নয়; বরং একটি সমাধানমুখী, মানবাধিকারভিত্তিক রাজনৈতিক পরিবেশ গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তারেক রহমান প্রতিশ্রুতি দেন—
“বাংলাদেশের কোনো নাগরিককে আর রাষ্ট্রের ভয় নিয়ে বাঁচতে হবে না— সে সরকারের সমর্থক হোক বা বিরোধী মতের হোক।”
‘প্রয়োজন রাজনীতির চেয়েও বড় কিছু— মানবাধিকারের সুরক্ষায় জাতীয় ঐক্য’
সবশেষে দেশের নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এখন সময় দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে একটি মানবাধিকারসম্মত, গণতান্ত্রিক, ভয়মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার।
“বাংলাদেশের মানুষ এখন মানবাধিকার রক্ষার অঙ্গীকারে ঐক্যবদ্ধ। প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।”