রমজান আলী,বান্দরবান প্রতিনিধি : বান্দরবানে পার্বত্য জেলায় সদ্য বদলীকৃত বিতর্কিত বরগুনা জেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ জসীম উদ্দীন এর বদলী আদেশ বাতিলের দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ, বান্দরবান পার্বত্য জেলা শাখা। উক্ত শিক্ষা কর্মকর্তা একাধিক অনৈতিক ও গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত এবং নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামী।
আজ (০১ ডিসেম্বর, ২০২৫) বিকাল ৩ ঘটিকায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি) বান্দরবান পার্বত্য জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মিছবাহ উদ্দীন এর নেতৃত্বে জেলা সি. সহ-সভাপতি জমির উদ্দীন ও সহ-সভাপতি জানে আলমসহ সংগঠনের জেলা শাখার অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
এসময় জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মিছবাহ উদ্দীন বলেন, বান্দরবান পার্বত্য জেলা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ও ভৌগোলিক অঞ্চল হিসেবে বরাবরই জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এই জেলার প্রতি একধরনের বৈষম্যমূলক মনোভাব ও অপমানজনক প্রশাসনিক অপসংস্কৃতি বহু বছর ধরে চলমান রয়েছে, যার সবচেয়ে জঘন্য রূপ হলো “শাস্তিস্বরূপ বদলি”।
আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ্য করছি, গত ৩০ নভেম্বর, ২০২৫ইং তারিখে জেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে মোহাম্মদ জসীম উদ্দীনকে বরগুনা জেলা থেকে বান্দরবান জেলায় বদলী করা হয়েছে, যার বিরুদ্ধে একাধিক অনৈতিক এবং অসৎ কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ও প্রমাণ রয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, বিগত ৫ অক্টোবর বরগুনা জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, বরগুনা সদর উপজেলার ফুলঝুড়ি ইউনিয়নের একটি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এক প্রবাসী স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পরেন। ঐ নারীর নাম লাভলী আক্তার নিপা, যার প্রবাসী স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য করেন জসিম। পরে ২০২২ সালের ২৫ জুন দশ লাখ টাকা কাবিনে বিয়ে করেন তিনি। তার বিয়ের খবর চট্টগ্রামে বসবাসরত প্রথম স্ত্রী জানতে পারলে এ নিয়ে তৈরি হয় দ্বন্দ্ব। পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে নিপাকে এড়িয়ে চলতে থাকেন জসিম। গত ৫ অক্টোবর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে ১ কোটি ২২ লাখ ৬৬৬ টাকার মামলা দায়ের করেন জসিম উদ্দিনের দ্বিতীয় স্ত্রী লাভলী আক্তার নিপা, উক্ত মামলায় আদালত তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন।
তিনি আরো বলেন, উক্ত শিক্ষা কর্মকর্তার অনৈতিক কার্যক্রমের সংবাদ প্রকাশ করা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তার ক্ষমতাবলে হয়রানী ও মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। উক্ত মিথ্যা ও হয়রানীমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবি এবং তার (মোহাম্মদ জসীম উদ্দীন) শাস্তির দাবীতে বরগুনা জেলার সর্বস্তরের জনগণ ও গণমাধ্যমকর্মীগণ’ বিগত ০৯ নভেম্বর, ২০২৫ইং তারিখে বরগুনায় মানববন্ধন করেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, এই বদলি আদেশ কেবল মোহাম্মদ জসীম উদ্দীনের জন্য শাস্তি নয়, প্রকৃতপক্ষে এটি পুরো বান্দরবান জেলার জন্য একটি অপমান। এমন একজন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের দায়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে আমাদের বান্দরবান জেলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করার অর্থ হলো, আমাদের ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক ও শিক্ষাপ্রশাসনের প্রতি এক ধরনের ঝুঁকি ও হুমকি তৈরি করবে এবং নৈতিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় ঘটবে। অতএব, আমাদের উল্লেখিত কারণপূর্বক ছাত্র পরিষদ স্পষ্ট ভাষায় জানাচ্ছি, এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল না হলে ছাত্রসমাজ, অভিভাবক, শিক্ষক এবং সচেতন নাগরিকবৃন্দকে নিয়ে আমরা অবস্থান কর্মসূচি, জেলা শিক্ষা অফিস ঘেরাও সহ শাস্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।
ছাত্র পরিষদের নেতৃবৃন্দ স্মারকলিপিতে ৫দফা দাবিসমূহ তুলে ধরেন,
১. জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ জসীম উদ্দীন এর বান্দরবান বদলির আদেশ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
২. শাস্তিমূলক বদলির নামে বান্দরবানসহ পার্বত্য অঞ্চলকে অবমাননার অপসংস্কৃতি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
৩. পার্বত্য জেলায় বদলি ও নিয়োগে স্বচ্ছতা, যোগ্যতা ও সম্মান নিশ্চিত করতে হবে।
৪. অভিযোগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট অভিযোগের তদন্ত ও নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কার্যত দায়িত্ব থেকে বিরত থাকবেন এমন নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে হবে।
৫. পরবর্তী যে কোনো শাস্তিমূলক বদলির আদেশ থেকে বান্দরবান জেলার নাম বাদ দিতে হবে।