মোঃ শরিফুল ইসলাম, দাউদকান্দি।। কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বিটেশ্বর ইউনিয়নের চন্দ্রশেখরদী গ্রামে পৈত্রিক ভিটে রক্ষায় লড়াই করছেন ৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ কৃষক শাহজালাল। একই গ্রামের আবুল কাশেম সরকারের ছেলে কাউছার আলম সরকার (৪২)—যাকে এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে ভূমিদস্যু হিসেবে চেনে—তার বিরুদ্ধে চলছে এই সংগ্রাম।
বৈধ মালিকানা সত্ত্বেও শান্তিতে নেই শাহজালাল
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, চন্দ্রশেখরদী মৌজার বিএস চূড়ান্ত ৩৯৮ নং খতিয়ানে উল্লেখিত জমির বৈধ মালিক ও দখলদার শাহজালাল। decades ধরে যে জমিতে তার পিতার ভিটে রয়েছে, এখন সেটিই দখল করে নিতে উঠেপড়ে লেগেছে এক প্রভাবশালী মহল।
অন্যদিকে কাউছার আলম সরকার ওই জমির পাশে প্রতিষ্ঠা করেছেন “আলহাজ্ব আবু কাশেম হোসনেআরা হাফিজিয়া মাদ্রাসা”, যেখানে বর্তমানে প্রায় ১০ জন ছাত্র পড়াশোনা করছে। ২০২২ সালে মাত্র ৪ শতক জমি ক্রয় করলেও পরবর্তীতে মাদ্রাসা সম্প্রসারণের নাম করে অতিরিক্ত আরও দুই শতক জমি দখল করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এখন লক্ষ্য—শাহজালালের পৈত্রিক জমি।
স্থানীয়রা জানান, “মাদ্রাসার নাম করে জমি দখল করার ঘটনা দুঃখজনক। কাউছার আগে থেকেও এ ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত ছিল।”
মামলার পর মামলা—কিন্তু ন্যায়বিচার দুরাশা
ঘটনাটি নিয়ে ইতোমধ্যে ৫টির বেশি মামলা হয়েছে। কিন্তু ভুক্তভোগী পরিবার দাবি করেছে, তদন্তকারীদের প্রভাবিত করে তৈরি করা হচ্ছে “ভায়েজড রিপোর্ট”, যার ফলে প্রকৃত মালিক বিচার পাচ্ছেন না।
বৃদ্ধ কৃষক শাহজালাল বলেন,
“আমি আমার পিতার ভিটে রক্ষা করতে যুদ্ধ করছি। দেওয়ানী ৬৪৫, ১৪৫ ও ১৪৭ ধারা চলমান আছে। আমি পুনঃতদন্ত চাই। প্রশাসন সরেজমিন গিয়ে তদন্ত করে সঠিক রিপোর্ট আদালতে জমা দিক—এটাই আমার একমাত্র চাওয়া।”
তার পরিবার জানায়, মামলা, হাজিরা ও আইনজীবীর খরচ বহন করতে গিয়ে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বয়সের ভারে ন্যুব্জ শাহজালাল এখনো প্রতিদিন থানায় ও কোর্টে ছুটছেন।
এলাকাবাসীর ক্ষোভ—প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ দাবি
স্থানীয়দের একজন বলেন,
“একজন বৃদ্ধ কৃষককে হয়রানি করা, ভিটেমাটি কাড়ার চেষ্টা—এটা অত্যন্ত নিন্দনীয়। প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে আরও বড় সংঘাতের সৃষ্টি হতে পারে।”
আরেকজন বলেন,
“মাদ্রাসার আড়ালে কেউ যদি জোর করে জমি দখল করে, তাহলে তার বিচার হওয়া উচিত। আমরা চাই সঠিকভাবে তদন্ত হোক।”
প্রশাসনের ভূমিকা প্রয়োজন
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষ আদালতে লড়াই করছে। তবে অভিযোগের সত্যতা জানতে পুনরায় তদন্ত করা হলে সঠিক চিত্র স্পষ্ট হবে বলে তারা মনে করছেন।
আইনজীবীরা বলছেন—জমিদখল ও বাড়ি দখলের মতো ঘটনাকে ‘সিভিল ডিসপিউট’ হিসেবে দেখলেও এখানে অবৈধ দখলচেষ্টা, ভয়ভীতি ও হয়রানির অভিযোগ থাকায় প্রশাসন চাইলে ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশনও করতে পারে।
—
শেষ কথা
বৃদ্ধ কৃষক শাহজালালের দাবি একটাই—
“আমার পিতার ভিটে যেন রক্ষা পাই। বিচার চাই, শান্তি চাই।”
স্থানীয়দের প্রত্যাশা—প্রশাসন দ্রুত তদন্তে নেমে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে, আর একজন নিরপরাধ কৃষক তার পৈত্রিক ভিটে ফিরে পাবেন নিরাপত্তা।