মঈন মাহমুদ : আজ ২১ জুলাই রাজধানীর বিইপিআরসি’র সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিল (বিইপিআরসি)-এর উদ্যোগে Ôensuring energy security through applied research: media as a catalystÕ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন (বিইপিআরসি)-এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওয়াহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, চীন আরঅ্যান্ডডিতে (গবেষণা ও উন্নয়ন) অনেক এগিয়ে গেছে। আমাদের কৃষিবিদরা বিপ্লব এনেছে, আর কোনো খাতে উল্লেখ করার মতো কিছু নেই।
তিনি বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় মুঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) গবেষণার জন্য ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত তহবিল দিয়ে থাকে। তাদের এই টাকা দিয়ে গবেষণা করার সম্ভব নয়, বড়জোর স্ট্যাডি পেপার হতে পারে। কালচারটা পরিবর্তন করা দরকার, আমরা গবেষণা ও গবেষকবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে চাই। এখানে একাডেমিয়া এবং শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন গড়ে তোলার কাজ করছি।
তিনি বলেন, আমরা গবেষণা তহবিল দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি। প্রাথমিকভাবে ৪ কোটি টাকা পর্যন্ত তহবিল দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। যে কেউ আমাদের এখানে আবেদন করতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে আইডিয়া জমা দিতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা শুধু গবেষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছি না। উদ্ভাবন কিভাবে কাজে লাগানো যায় সে নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। বুয়েট যে ইজিবাইক তৈরি করেছে, আমরা সেখানে অর্থায়ন করেছি। আমরা চাই প্রায়োগিক গবেষণা চলুক, কোথাও কোন ইনোভেশন কিছু থাকলে আমাদের নজরে আনার অনুরোধ থাকল।
চেয়ারম্যান আক্ষেপ করে বলেন, ৯ বছর বয়স হয়েছে বিইপিআরসির, অথচ আমি নিয়োগ পাওয়ার আগে পর্যন্ত জানতামনা এই ধরণের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। জনগণ এর সম্পর্কে অবগত নয়। নিজস্ব জনবল বলতে মাত্র ২ জন ড্রাইভার রয়েছে, আর সবই চলছে ডেপুটেশনে। ডেপুটেশন থাকা কর্মকর্তা একটা সময় পরে যখন চলে যাচ্ছেন তাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে চলে যাচ্ছেন। যে জন্য নিজস্ব জনবল থাকাটা খুবই জরুরি। সে কাজও শুরু হয়েছে।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে বিইপিআরসির সদস্য (অন্ট্রাপ্রনারশিপ) ড. মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১৩টি গবেষণা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। যার মধ্যে ৯টি সমাপ্ত হয়েছে, ৪টি চলমান রয়েছে। বর্জ্য থেকে বায়োকল উৎপাদন, কম গতির বাতাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সাশ্রয়ী সিনক্রোফেজর ডিভাইস, প্রয়োরিটি লোড ম্যানেজমেন্ট ভিত্তিক স্মার্ট মিটার, সাবস্টেশন রিমোর্ট মনিটরিং প্রায়োগিক ক্ষেত্রে সফলভাবে ব্যবহারযোগ্য।
এনার্জি হারভেস্টিং গøাস, বর্জ্য থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায় বিগ ডাটার প্রয়োগ, সৌর শক্তি ব্যবহার করে পানি থেকে হাইড্রোজেন উৎপাদন সংশ্লিষ্ট গবেষণা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এনার্জি হারভেস্টিং গ্লাস সফল হলে ভবনের জানালার গøাস থেকেই বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এগুলো প্রকল্পের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি ইউনিট ভিত্তিক সমস্যার স্থানীয় সমাধান বের করতে। যে কেউ যে কোনো সময়ে তাদের প্রস্তাবনা জমা দিতে পারবেন। এর জন্য কোন ডেট লাইন নেই।
বিইপিআরসির গবেষণা কার্যক্রম তুলে ধরেন পরিচালক (ইনোভেশন) প্রকৌশলী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, মানব বর্জ্য থেকে গ্যাসোলিন, ডিজেল ও এভিয়েশন ফুয়েল উৎপাদনের দারুণ সম্ভাবনা দেখছি। বছরে প্রায় ২ হাজার কোটি থেকে ৪ হাজার কোটি টাকা আয় করার সুযোগ রয়েছে।
তিনি বলে, মানসম্মত প্রস্তাবনার অনেক ঘাটতি রয়েছে। হয়তো এমন হতে পারে অনেকেই আমাদের সম্পর্কে অবগত না।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) প্রধান প্রকৌশলী (পিঅ্যান্ডডি) গোবিন্দ চন্দ্র লাহা বলেন, আমাদের দেশে বছরে ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার এয়ারফিল্টার আমদানি করা হয়। আয়তন বেশি হওয়ার পরিবহন খরচ অনেক বেশি। পরিবহন খরচের টাকা বিনিয়োগ করে এয়ার ফিল্টার উৎপাদন কারখানা স্থাপন করা সম্ভব। অথচ বছরের পর বছর ধরে আমদানি করে যাচ্ছি। এ রকম অনেক বিষয় রয়েছে।
সেমিনারে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সচিব নজরুল ইসলাম, মন্ত্রণালয়, স্রেডার, ডিপিডিসি, তিতাস গ্যাসসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।