নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক ও আবেগ প্রকাশ করে ফেসবুকে একটি হৃদয়স্পর্শী পোস্ট দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
মঙ্গলবার দুপুরে দেওয়া পোস্টে তারেক রহমান লেখেন, “আমার মা, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, সর্বশক্তিমান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে আজ আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।”
তিনি বলেন, “অনেকের কাছে তিনি ছিলেন দেশনেত্রী, আপোষহীন নেত্রী; অনেকের কাছে গণতন্ত্রের মা, বাংলাদেশের মা। আজ দেশ গভীরভাবে শোকাহত এমন একজন পথপ্রদর্শককে হারিয়ে, যিনি দেশের গণতান্ত্রিক পথযাত্রায় অনিঃশেষ ভূমিকা রেখেছেন।”
মায়ের সঙ্গে নিজের ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথা তুলে ধরে তারেক রহমান লেখেন, “আমার কাছে খালেদা জিয়া একজন মমতাময়ী মা, যিনি নিজের সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছেন দেশ ও মানুষের জন্য। আজীবন লড়েছেন স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে; নেতৃত্ব দিয়েছেন স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে।”
পোস্টে তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ ত্যাগ ও সংগ্রামের মধ্যেও বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন পরিবারের প্রকৃত অভিভাবক। বারবার গ্রেপ্তার, চিকিৎসা থেকে বঞ্চনা এবং সর্বোচ্চ নিপীড়নের শিকার হয়েও তিনি পরিবারের প্রতিটি সদস্যের মাঝে সাহস, সহানুভূতি ও দেশপ্রেমের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন।
তারেক রহমান লেখেন, “দেশের জন্য তিনি হারিয়েছেন স্বামী, হারিয়েছেন সন্তান। তাই এই দেশ, এই দেশের মানুষই ছিল তার পরিবার, তার সত্তা, তার অস্তিত্ব। তিনি রেখে গেছেন জনসেবা, ত্যাগ ও সংগ্রামের এক অবিস্মরণীয় ইতিহাস, যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিক্রমায় চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
পোস্টের শেষে তিনি দেশবাসীর কাছে মায়ের জন্য দোয়া চেয়ে লেখেন, “আপনারা সবাই আমার মার জন্য দোয়া করবেন। তার প্রতি দেশবাসীর আবেগ, ভালোবাসা ও বৈশ্বিক শ্রদ্ধায় আমি ও আমার পরিবার চিরকৃতজ্ঞ।”
উল্লেখ্য, ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সকাল ৬টায় বেগম খালেদা জিয়া ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। বিএনপি সাত দিনের শোক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
দীর্ঘ ১৬ বছরের আওয়ামী লীগ শাসনামলে রাজনৈতিক নির্যাতন, কারাবাস ও চিকিৎসা বঞ্চনার শিকার হন খালেদা জিয়া। পরে করোনাকালে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পেলেও গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’য় কার্যত বন্দি ছিলেন তিনি। চিকিৎসা না পাওয়ায় হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস ও কিডনির জটিলতাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হন।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশজুড়ে গণআন্দোলন শুরু হয়ে সরকার পতনের দিকে গড়ায়। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি তিনি লন্ডনে যান এবং ১১৭ দিন চিকিৎসা শেষে ৬ মে দেশে ফেরেন। সাময়িকভাবে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলেও বয়স ও জটিল রোগের কারণে তিনি ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়েন।
সবশেষ গত ২৩ নভেম্বর গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এক মাসের বেশি সময় চিকিৎসাধীন থাকার পর অবশেষে তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।