বঙ্গ নিউজ বিডি প্রতিনিধি : জামায়াতে ইসলামীসহ আট দলীয় জোটের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সম্ভাব্য নির্বাচনী জোট বা আসন সমঝোতা নিয়ে দলটির ভেতরে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আনুষ্ঠানিক আপত্তি জানিয়েছেন এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির ৩০ নেতা।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) তারা দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের কাছে একটি চিঠি দেন। চিঠিতে বলা হয়, এই বিষয়ে দ্রুত সুষ্ঠু ও স্পষ্ট সিদ্ধান্ত না এলে অনেক নেতা পদত্যাগ করতে পারেন।
একের পর এক পদত্যাগ
এই সংকটের মধ্যেই শনিবার এনসিপি থেকে পদত্যাগ করেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ও আলোচিত তরুণ রাজনীতিক ডা. তাসনিম জারা। তিনি ঢাকা-৯ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে পদত্যাগ করেন এনসিপির চট্টগ্রাম মহানগরের প্রধান সমন্বয়কারী মীর আরশাদুল হক।
এছাড়া ডা. তাসনিম জারার স্বামী ও এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহও পদত্যাগ করবেন বলে জানা গেছে। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, ‘ব্যক্তিগত কারণে’ তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। উল্লেখ্য, খালেদ সাইফুল্লাহও ৩০ নেতার চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের একজন।
চিঠিতে যেসব আপত্তি
৩০ নেতার দেওয়া চিঠিতে দলের ঘোষিত আদর্শ, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা এবং গণতান্ত্রিক নৈতিকতার প্রশ্নে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে যেকোনো ধরনের জোটের তীব্র বিরোধিতা করা হয়।
চিঠিতে বলা হয়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর গত এক বছরে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্রসংগঠন ছাত্র শিবির বিভাজনমূলক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। পাশাপাশি এনসিপির বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি, স্যাবোটেজ, অপপ্রচার, ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলোতে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) ও ছাত্রশক্তিকে ঘিরে মিথ্যাচার এবং অনলাইন ফোর্সের মাধ্যমে এনসিপি ও তাদের ছাত্রসংগঠনের নারী সদস্যদের চরিত্রহননের অভিযোগও তোলা হয়।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ধর্মকে কেন্দ্র করে সামাজিক ফ্যাসিবাদের উত্থানের আশঙ্কা দেশের ভবিষ্যতের জন্য ‘অশনিসংকেত’।
১৯৭১ ও নৈতিক অবস্থান
নেতারা চিঠিতে জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক ইতিহাসের কথাও তুলে ধরেন। বিশেষ করে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকা, গণহত্যায় সহযোগিতা এবং সে সময় সংঘটিত অপরাধের প্রশ্নে দলটির অবস্থানকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চেতনা ও এনসিপির মূল্যবোধের সঙ্গে মৌলিকভাবে সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করা হয়।
চিঠিতে স্পষ্ট করে বলা হয়, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কোনো ধরনের রাজনৈতিক জোট এনসিপির নৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করবে এবং এতে দলের রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এ বিষয়ে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।