বরিশাল প্রতিনিধি : বরিশালে জুলাই বিপ্লবে আন্দোলনরত ছাত্র জনতার উপর হামলা নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি আলাউদ্দিন আলো ও নিজামউদ্দিনের নেতৃত্বে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও জেলার সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব মারযুক আবদুল্লাহকে গত ২৩/০৯/২০২৫ তারিখ সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে বরিশাল নগরীর বিবির পুকুর পার এলাকা থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী। থানা পুলিশ জানতে পেরে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। তবে গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানান কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই দিন সন্ধ্যা আনুমানিক ৬.১৫ ঘটিকার দিকে মামলার আসামি আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন আলো ও নিজামউদ্দিন এর নেতৃত্বে একদল আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসী মারযুক আবদুল্লাহকে জোরপূর্বক গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে বরিশাল কোতয়ালী থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। পরবর্তীতে পুলিশ ও স্থানীয়দের সহায়তায় বরিশাল জিলা স্কুলের সামনে থেকে মারযুককে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করা হয় এবং দ্রুত বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার সময় বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ বরিশাল মহানগরের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশকে সহযোগিতা করে। তাদের নেতৃত্বে হামলাকারীদের প্রতিরোধ করা সম্ভব হয় বলে জানা যায়।
উক্ত সংগঠনটির নেতৃবৃন্দের সাথে পরবর্তীতে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান,
> “মারযুক আবদুল্লাহর উপর এই বর্বর হামলা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের উপর নগ্ন আঘাত। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং প্রশাসনের নিকট দ্রুত দোষীদের আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানাচ্ছি।”
তারা আরও যোগ করেন,
> “ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের দমননীতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে,যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো মারযুক আব্দুল্লাহকে এইভাবে নির্যাতনের শিকার না হতে হয়।একজন জুলাই যোদ্ধার ওপর এরকম হামলা আমরা কখনোই মেনে নেবো না।”
প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেছেন, মারযুকের উপর এই হামলার নেতৃত্ব দিয়েছে মিশু এন্টারপ্রাইজের মালিক আলাউদ্দিন আলো ও অবৈধ ভোটার বিহীন আওয়ামী সরকারের এমপি হাফিজ মল্লিকের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মোঃ নিজামউদ্দিন শিকদার, আওয়ামী লীগের দোসর এবং স্বৈরাচারের দালাল মামুনুর রশীদ নোমানী। এ ছাড়া ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল বরিশাল সিটির সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠভাজন মঈন জমাদ্দারের ভাই সোহেল জমাদ্দার, নূর ইসলাম কাউন্সিলরসহ মামলার এজাহারভুক্ত একাধিক পলাতক আসামী।
দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগপন্থী সন্ত্রাসীরা মারযুক আবদুল্লাহকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করে আসছিল। এর পূর্বে মারযুক জুলাইয়ের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষোভ থেকে এই হামলা। পাশাপাশি মামলা প্রত্যাহারের হুমকি থেকে শুরু করে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেওয়ার ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে। এমনকি গণমাধ্যমে তাকে বিতর্কিত করার লক্ষ্যে নানা ধরনের মিথ্যা প্রচারণাও চালানো হয় ইতোপূর্বে বলে জানান মামলার বাদি মারজুক আব্দুল্লাহ।
জুলাইয়ের পক্ষের ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে, হামলার সঙ্গে জড়িত কুখ্যাত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তারা সতর্ক করে বলেছেন,
> “এই হামলা শুধু একজন জুলাইয়ের সহযোদ্ধার ওপর নয়, বরং মুক্তচিন্তা ও ন্যায়বিচারের উপর আঘাত। পাশাপাশি ভবিষ্যতে অন্য কোনো জুলাইয়ের সহযোদ্ধার ওপর আমরা আর কোনো অন্যায় বরদাশত করব না।”
বর্তমানে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘটনাটি তদন্তাধীন বলে জানা গেছে।