সংবাদ প্রতিবেদক: কাজল : গাজীপুরের বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) আর্মি ফার্মা মাঠে শুরু হয়েছে কথিত মীনা বাজার ও ক্ষুদ্র–কুটির শিল্প মেলা। কিন্তু বাস্তবে মেলাটি রূপ নিয়েছে বহিরাগত ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে এক অবৈধ জুয়ার আড্ডায়—র্যাফেল ড্র, লটারি, ভাগ্যের খেলা, অশ্লীল সঙ্গীত ও রাতভর শব্দসন্ত্রাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থী থেকে দিনমজুর পর্যন্ত সর্বনাশের ফাঁদে পড়ছে। পরিবারে ভাঙন, সমাজে অস্থিরতা এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় অশুভ ছায়া নেমে এসেছে।
সেনাবাহিনী জাতির আস্থার প্রতীক, অথচ তাদের নিয়ন্ত্রিত কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এ ধরনের অবৈধ আয়োজন জনগণের মনে ক্ষোভ ও সন্দেহের জন্ম দিয়েছে—এ আয়োজন কি কর্তৃপক্ষের অজ্ঞাতে, নাকি নেপথ্যের প্রশ্রয়ে? প্রতিরক্ষা বাহিনীর ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হলে তা কেবল অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের মর্যাদাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
গতবারের মতো এবারও একই চিত্র—চুরি–ছিনতাই, মারামারি, ছুরিকাঘাত, রাতভর অশ্লীল নৃত্য–গান, যানজটে জনজীবন পঙ্গু হওয়া, লটারির নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের উপেক্ষা। স্থানীয়রা যেন কেবল অসহায় দর্শক।
সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থা শিক্ষার্থীদের। পরীক্ষার মৌসুমে টিফিনের টাকা জুয়ায় হারিয়ে রাতভর মাঠে কাটানো কিশোর–তরুণেরা শিক্ষা থেকে সরে যাচ্ছে, পরিবারে অশান্তি বাড়ছে, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধ্বংসের অতলে তলাচ্ছে।
এই মেলা বসেছে অত্যন্ত সংবেদনশীল এলাকায়—চারপাশে রয়েছে সমরাস্ত্র কারখানা, টাকশাল, বিএমটিএফ, বিডিপি, ল্যাব ফোর্সেস প্রশিক্ষণ স্কুল, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট) এবং অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে এটি কেবল সামাজিক অবক্ষয় নয়, বরং সরাসরি জাতীয় নিরাপত্তার ঝুঁকি, যা আন্তর্জাতিকভাবে একটি সিকিউরিটি থ্রেট হিসেবে দেখা দিতে পারে।
এদিকে মাঠ ও আশপাশের সড়কে প্রতিদিন নেমে আসছে নরকযন্ত্রণা—যানজট, ধুলোবালি, শব্দদূষণ, বিশৃঙ্খলা, রাতভর অশান্তি। জনগণের ক্ষোভ–বিক্ষোভ উপেক্ষা করে পুনরায় অনুমোদন দেওয়া স্থানীয়দের চোখে নিছক অবিচার।
এই অবস্থায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী, গাজীপুর মেট্রো থানার ইমাম ওলাময় মাশায়েখ পরিষদ, ইসলামপ্রিয় তৌহিদী জনতা ও সচেতন নাগরিক সমাজ, গাজীপুর-এর নেতৃত্বে সংগঠনের প্রধান মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক ঘোষণা দিয়েছেন—২২ আগস্ট বিএমটিএফ মেইন গেইট মোড়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ হবে এবং ২৪ আগস্ট প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করা হবে।
তাদের অঙ্গীকার স্পষ্ট—যে মেলা জনকল্যাণ আনে না, বরং জুয়ার প্রসার ঘটায়, তরুণ সমাজকে ধ্বংস করে—সে আয়োজন বাংলার মাটিতে চলতে দেওয়া হবে না।
আজ গাজীপুরবাসীর কণ্ঠ একতাবদ্ধ, প্রতিবাদ দৃপ্ত: অন্যায় সহ্য হবে না, অবৈধ জুয়ার আসর ভাঙতে হবে, তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করতেই হবে। এই লড়াই শুধু গাজীপুরের নয়—এ লড়াই গোটা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রক্ষার লড়াই।