বিশেষ প্রতিনিধি : বাংলাদেশের অন্যতম ব্যস্ত সড়ক পরিবহন অফিস ইকুরিয়া বিআরটিএ এখন জনগণের ভোগান্তির প্রতীক। ঘুষ, দালালচক্র, এবং প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা মিলে এই অফিসটি হয়ে উঠেছে একটি দুর্নীতির অঘোষিত দুর্গ। অভিযোগ উঠেছে, একটি সুসংগঠিত চক্র দীর্ঘদিন ধরে এই কার্যালয়ে ঘুষের বিনিময়ে সরকারি সেবা ‘বিক্রি’ করছে।
নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা জলিল আহমেদ পেশায় একজন স্কুলশিক্ষক। তিনি তিন মাস আগে একটি মোটরসাইকেলের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ইকুরিয়া বিআরটিএতে আবেদন করেন। নিয়মমাফিক ফর্ম পূরণ করে, ফি জমা দিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন পরীক্ষার তারিখের জন্য। কিন্তু সপ্তাহের পর সপ্তাহ কেটে গেলেও কোনো অগ্রগতি হয়নি। “প্রথমে ভাবছিলাম হয়তো একটু দেরি হচ্ছে,” বলেন জলিল আহমেদ, “কিন্তু পরে বুঝলাম দালালদের টাকা না দিলে কিছুই হয় না। এক লোক এসে বলল, ‘তিন হাজার টাকা দেন, কালই টেস্ট হয়ে যাবে।’ আমি রাজি হইনি, তারপর থেকে আমার ফাইলই যেন গায়েব হয়ে গেছে।”
জলিল আহমেদের মতো শত শত আবেদনকারী দিনের পর দিন ঘুরে ফিরে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। যাঁরা দালালদের টাকা দেন, তাঁদের কাজ হয়ে যায় অনায়াসে।
সূত্রে জানা গেছে, এই দালাল সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন হালিম মিয়া, যিনি একসময় অফিস ক্যান্টিন পরিচালনা করতেন। বর্তমানে তাঁর কোনো অফিসিয়াল পদ না থাকলেও, অফিস চত্বরে তাঁর দাপট চোখে পড়ার মতো। সেবা প্রত্যাশীদের তিনি ‘সহযোগিতা’র নামে ঘুষ গ্রহণ করেন এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের ভিত্তিতে দ্রুত কাজ করিয়ে দেন।
একজন সচেতন কর্মকর্তা বলেন, “হালিম মিয়া অফিসের বাইরেও একটা বিশাল চেইন তৈরি করেছে। তার সঙ্গে সাবেক ও বর্তমান কিছু কর্মকর্তা যুক্ত আছে। তাকে কেউ কিছু বলতেও সাহস পায় না।”
দুর্নীতির এত প্রকাশ্য অবস্থান সত্ত্বেও প্রশাসন যেন চোখ বন্ধ করে রেখেছে। অভিযোগ জমা পড়লেও নেই কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা। এমনকি স্থানীয় সাংবাদিকদের অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন উপেক্ষা করে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
একজন স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী বলেন, “বিভিন্ন সময়ে আমরা প্রতিবেদন করেছি, তথ্য প্রমাণ দিয়েছি, কিন্তু উল্টো আমাদের হুমকি দেওয়া হয়। যেন এই দুর্নীতিকে রক্ষা করার জন্যই একটি অদৃশ্য চক্র সক্রিয়।”
জনগণের প্রশ্ন—দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি তাহলে কোথায়?