সংবাদ প্রতিবেদক: কাজল, দেশজুড়ে দীর্ঘদিন ধরে অন্যায়–অবিচারের ঘনঘটা যে অন্ধকার তৈরি করেছে, তার ভিতরেই নিঃশব্দে জমা হচ্ছে এক অদৃশ্য শক্তি—মানুষের বুকের গভীরে চাপা পড়ে থাকা যন্ত্রণা, ক্ষোভ, ক্ষত আর অপমানের দীর্ঘ ইতিহাস। ব্যক্তিগত কষ্ট, সামাজিক অসঙ্গতি কিংবা রাষ্ট্রীয় অবিচার—সবকিছু মিলেই গড়ে উঠছে এমন এক অগ্নিশক্তি, যা চোখে দেখা যায় না, কিন্তু মুহূর্তের সঠিক সময়ে আগুনের মতো বিস্ফোরিত হওয়ার ক্ষমতা রাখে।
নিঃশব্দ শক্তিই ইতিহাস বদলায়
মানুষ প্রথমে তাকিয়ে দেখে, তারপর বোঝে, পরে সহ্য করে—কিন্তু কোনো দিন অযৌক্তিক অন্যায়কে স্থায়ীভাবে মেনে নেয় না। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়—
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন,
১৯৬৯-এর গণ–অভ্যুত্থান,
৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ,
কিংবা সাম্প্রতিক বিভিন্ন গণদাবি—
সবকটির শুরু হয়েছিল সাধারণ মানুষের সেই শক্তিকে কেন্দ্র করে, যা প্রথমে নিঃশব্দে জমেছিল, পরে সময়ের দাবি মেনে আগুন হয়ে উঠেছিল।
আজকের বাংলাদেশেও একই শক্তি আবার মাথা তুলছে—চাপা ক্ষোভের পরিবর্তে সুসংগঠিত ন্যায়বোধের শক্তি। নাগরিকদের মনে প্রশ্ন, বিচারহীনতা, বৈষম্য, অন্যায় আচরণ, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক ভয়ের পরিবেশ কতদিন সহ্য করা যায়?
চুপ থাকা মানেই পরাজয় নয়
অন্যায়কারীরা প্রায়ই ভাবে, মানুষ নীরব মানেই দুর্বল। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন—
চুপ থাকা মানে শক্তি সঞ্চয়।
চুপ থাকা মানে শত্রু পর্যবেক্ষণ।
চুপ থাকা মানে সঠিক মুহূর্তের জন্য প্রস্তুতি।
যে ব্যক্তি বা যে জাতি সত্য–ন্যায় রক্ষার জন্য অপেক্ষা করে, সে কখনো আপোষ করে না। বরং তার ভেতরে প্রতিরোধের আগুন ধীরে ধীরে প্রজ্বলিত হয়—এমন আগুন, যার বিস্ফোরণ অন্যায়ের মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে পারে।
জাতির বুকের ভেতরের আগুন এখন নতুন রূপ নিচ্ছে
সমাজবিজ্ঞানীরা উল্লেখ করছেন—দীর্ঘমেয়াদি অবিচার যখন চরমে পৌঁছায়, তখন সাধারণ মানুষ থেকেই তৈরি হয় সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরোধ। বিশ্লেষকদের মতে—
ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন,
প্রশাসনিক জবাবদিহি দাবি,
রাজনৈতিক সংস্কারের চাপ,
মানবাধিকারের প্রশ্ন—
এসবই এখন ধীরে ধীরে জনমনে নতুন শক্তি তৈরি করছে।
এ শক্তি কোনো তাৎক্ষণিক ক্ষোভ নয়—এটি জমে থাকা পরিকল্পিত ন্যায়চেতনার প্রকাশ। যখন এই শক্তি পূর্ণতা পায়, তখন পরিবর্তনকে আর কেউ থামাতে পারে না।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে আগুনের মতো বিস্ফোরণ আসে বহু দিনের যন্ত্রণার ফল
অবমূল্যায়ন, অপমান, মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়া, নিরাপত্তাহীনতা, স্বজন হারানো, বিচারহীনতা—এই সবকিছুই মানুষের বুকের ভিতরে আগুন হয়ে জমা থাকে।
আজ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যে ন্যায়ের জন্য নতুন জাগরণ দেখা যাচ্ছে—এটি কোনো আকস্মিক প্রতিক্রিয়া নয়; এটি বহু দিনের লাঞ্ছনা, অবহেলা এবং প্রত্যাশাভঙ্গের প্রতিফলন।
ধৈর্য হোক ঢাল, ন্যায় হোক অস্ত্র
জাতি আজ একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে—যেখানে সমগ্র জাতির সম্মিলিত ধৈর্য, সচেতনতা এবং সত্যের প্রতি দায়িত্ববোধই হতে পারে বড় পরিবর্তনের চালিকাশক্তি।
ন্যায়কে প্রতিষ্ঠা করতে গেলে শব্দের প্রয়োজন কম; প্রয়োজন দৃঢ় সংকল্পের, নীরব শক্তির, এবং সত্যের পক্ষে অটল অবস্থানের।
শেষ কথা
আজ আমি জাতিকে আহ্বান জানাই—
যে গোপন আগুন আপনার ভেতরে জ্বলছে, তাকে অবমূল্যায়ন করবেন না।
কারণ সেই আগুনই একদিন ন্যায়কে প্রতিষ্ঠার জন্য রূপ নেবে অগ্নিশক্তিতে,
আর সেই অগ্নিশক্তিই বদলে দেবে এই দেশ, সমাজ এবং ভবিষ্যতের পথচলা।