প্রতিবেদক: কাজল , খুলনার খালিশপুর থানার বৈকালি, বয়রা—ল্যাংটা চাচার মাজার সংলগ্ন একটি হোমিওপ্যাথি ঔষধের দোকান থেকে হাত তৈরি বিষাক্ত এলকোহল (ল্যাক) সেবনে ১৪ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ৫ জন ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান এবং ৯ জন মারা যান খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, যাদের একজন ছিলেন লাইফ সাপোর্টে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ডা. এম. এ. আলী দীর্ঘদিন ধরে ঔষধ ব্যবসার আড়ালে অবৈধ মাদক ও মদ বিক্রি করে আসছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, তার ছেলে, মেয়ে ও মেয়ের জামাই এই অপরাধে জড়িত। পারিবারিক কলহের জেরে জামাইয়ের সঙ্গে ছোট মেয়ের বিচ্ছেদের পর মেয়েটিও একই নামে আরেকটি হোমিওপ্যাথি ঔষুধের দোকান চালু করে, যা হয়ে ওঠে মাদক ব্যবসার নতুন কেন্দ্র।
২০২৫ সালের ১৯ জুলাই, শনিবার, এই দোকান থেকেই মদ কিনে সেবনের পর একে একে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকেই। শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪-তে। এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, দোকানটিতে প্রতিদিন তরুণরা মাদক ও বিষাক্ত মদ কিনে সেবন করত।
ঘটনার পর সোনাডাঙ্গা মডেল থানার পুলিশ দোকানটি তালাবদ্ধ অবস্থায় পায়। উত্তেজিত জনতা তালা ভেঙে ভেতর থেকে বিষাক্ত মদের বোতল উদ্ধার করে। পুলিশ ডা. এম. এ. আলীকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করলেও তার ছেলে, মেয়ে ও জামাই পলাতক রয়েছে। বিষাক্ত মদের নমুনা পরীক্ষার পর পুলিশের পক্ষ থেকে মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কারণ নিশ্চিত করা হয়।
মৃতদের মধ্যে বৈকালি, ডুমুরিয়া ও বয়রা সেরের মোড় এলাকার বাসিন্দারা রয়েছেন। ঘটনাস্থল ছিল বয়রা পুজাখোলা মোড়, ইসলামী কলেজ সংলগ্ন এলাকা।
এলাকাবাসী এ ঘটনায় গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রশাসনের ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন এবং এই পরিবারের সকল সদস্যের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, পবিত্র মাজারের ছায়ায় গড়ে ওঠা এমন মাদক ব্যবসা শুধু এলাকার নয়—সমগ্র খুলনার জন্য লজ্জাজনক। তারা চান, প্রশাসন এবার যেন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং ভবিষ্যতে আর কোনো হোমিওপ্যাথি ঔষুধের দোকানের আড়ালে মরণ ফাঁদ তৈরি না হয়।
প্রশাসনিক দৃষ্টি আকর্ষণ:
এই ঘটনায় দেশের গণমাধ্যম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দফতর, স্বাস্থ্য অধিদফতর, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, স্থানীয় প্রশাসন ও বিচার বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে। জনগণের পক্ষ থেকে একান্ত দাবি—এই ঘটনায় জড়িত সকল অপরাধীর দ্রুত বিচার এবং খুলনায় মাদক নির্মূল কার্যক্রম আরও জোরদার করা হোক।