বঙ্গ নিউজ বিডি : প্রায় চার দশক ধরে বসবাসের পর ২০১০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ক্যান্টনমেন্টের শহীদ মঈনুল সড়কের ঐতিহাসিক বাড়িটি ছাড়তে বাধ্য হন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। বাড়ি ছাড়ার পরদিন তিনি অভিযোগ করেছিলেন— “আমাকে এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।” দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত এই উচ্ছেদ প্রক্রিয়ার কেন্দ্রবিন্দুতে আবারও উঠে এসেছে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মো. আব্দুল মুবীনের নাম।
ক্ষমতায় আসার পরই পদক্ষেপ শুরু
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে থাকে সরকার। বাড়িটি নাকি “অপ্রাতিষ্ঠানিক দখলে” ছিল—এমন দাবি তুলে পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেয় সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসন। সে সময় সেনাবাহিনী প্রধান ছিলেন জেনারেল মুবীন, যার ওপর দায়িত্ব পড়ে সরকারের নির্দেশ বাস্তবায়নের।
বিএনপি ও খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের অভিযোগ—
জেনারেল মুবীন ছিলেন বাড়ি উচ্ছেদের অন্যতম প্রধান স্থপতি, যিনি তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকারের পরিকল্পনাকে বাস্তবায়নে পুরো সামরিক কাঠামোকে সক্রিয় করেছিলেন।
উচ্ছেদের ঘটনা দেশজুড়ে তীব্র আলোচনার জন্ম দেয়
২০১০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে হঠাৎ করেই বাড়িতে ঢুকে পড়ে সামরিক কর্মকর্তারা। সময় দেওয়া হয় মাত্র কয়েক ঘণ্টা। বিএনপি নেতাদের দাবি—কোনো প্রস্তুতির সুযোগ ছাড়াই খালেদা জিয়াকে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করা হয়।
এ ঘটনায় দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা হয়; আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোও বিষয়টি পর্যবেক্ষণে আগ্রহ দেখায়।
—
ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে অপসারণেও মুবীনের সমর্থনের অভিযোগ
খালেদা জিয়ার বাড়ি উচ্ছেদের মাত্র এক বছর পর—২০১১ সালে—আরেকটি বড় বিতর্কের জন্ম দেয় শেখ হাসিনা সরকার। বয়সজনিত অজুহাতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। আদালতেও তার আবেদন টেকেনি।
গ্রামীণ ব্যাংক আইন সংশোধন করে ইউনূসকে শুধু গ্রামীণ নয়, সহায়ক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়।
রাজনৈতিক মহল ও বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি,
ইউনূসকে অপসারণেও পর্দার আড়ালে সমর্থক ছিলেন সেনাপ্রধান মুবীন।
সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে তিনি প্রশাসনিক প্রক্রিয়াগুলো দ্রুততর করেছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
—
করনের কারণ ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
বিশ্লেষকরা মনে করেন—
২০০৭ সালের সামরিক-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ইউনূসের রাজনৈতিক দল গঠনের প্রচেষ্টা আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার সম্পর্ককে শীতল করে তোলে।
ফলে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ফেরার পর ইউনূসের বিপক্ষে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়।
অন্যদিকে, বিএনপি দাবি করে—
সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দুর্বল করতে চেয়েছিল বলেই খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্ট বাড়ি উচ্ছেদকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল।
সেসময় সেনাপ্রধানের সমর্থন না থাকলে এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হতো না।
—
মুবীনের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে নতুন বিতর্ক
সম্প্রতি রাজনৈতিক অঙ্গনে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তৎকালীন সেনাপ্রধান মুবীনের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
অনেকে বলছেন—
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রতিশোধমূলক সিদ্ধান্তে সামরিক বাহিনীকে জড়ানো ছিল একটি বিপজ্জনক সংকেত, যার ফল আজও বহন করছে দেশের রাজনীতি।
বিএনপি নেতাদের ভাষায়—
“মুবীন নিরপেক্ষ থাকলে খালেদা জিয়া বাড়িছাড়া ও ড. ইউনূস ব্যাংকছাড়া—কোনো ঘটনাই ঘটত না।”
এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক তদন্ত হয়নি।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন,
এক যুগের বেশি সময় পরও এই দুটি ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গভীর দাগ হিসেবে রয়ে গেছে।