নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অনেক ঘটনা আছে যেগুলো প্রজন্মের পর প্রজন্ম আলোচিত হয়ে থাকে। তবে কিছু ঘটনা আছে যা রাজনৈতিক টানাপোড়েনের বাইরেও একধরনের ব্যক্তিগত অনুভূতির প্রতীক হয়ে ওঠে। তেমনই একটি ঘটনা হলো কাঁঠালিচাঁপার গাছ—যা বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রিয় ফুল।
১৯৯১ সালে দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তেজগাঁও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) প্রাঙ্গণে নিজের হাতে একটি কাঁঠালিচাঁপার চারা রোপণ করেছিলেন খালেদা জিয়া। তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের ভাষ্য অনুযায়ী, তখন তিনি বলেছিলেন—এ গাছ তাঁর ব্যক্তিগত অনুভূতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকবে এবং দেশের জন্য শুভ কামনার প্রতীক হিসেবেই তিনি এটি রোপণ করছেন।
গাছ কাটার অভিযোগ ও রাজনৈতিক দুঃখবোধ
তবে ১৯৯৬ সালে সরকার পরিবর্তনের পর ঘটল অন্যরকম ঘটনা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাকি খালেদা জিয়ার লাগানো সেই গাছটি কেটে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছিলেন—এমন দাবি বিএনপি নেতাদের। গাছটি কেন কাটা হয়েছিল, বা আদৌ কোনো প্রশাসনিক যুক্তি ছিল কি না—তা নিয়ে সরকারি পক্ষ কখনই আনুষ্ঠানিক মন্তব্য দেয়নি।
তবে বিএনপি নেতাদের মতে, এটি ছিল রাজনৈতিক প্রতিহিংসার এক প্রতীকী রূপ।
২০০১ সালে ফিরে এসে গভীর বেদনা প্রকাশ
২০০১ সালে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় ফিরে তেজগাঁওয়ের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এসে খালেদা জিয়া যখন জানতে পারেন যে তাঁর লাগানো প্রিয় কাঁঠালিচাঁপার গাছটি আর নেই—তখন তিনি মর্মাহত হয়েছিলেন বলে আওয়ামী লীগ-বিএনপি—উভয় দলের কয়েকজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা পরে বিভিন্ন সময় এমন তথ্য জানিয়েছেন।
কিছু সূত্র জানায়, তিনি নীরবে কিছুক্ষণ ওই স্থানটির দিকে তাকিয়ে ছিলেন এবং বিষয়টি তাঁর মনকে ব্যথিত করেছিল।
ফুলের গন্ধে রাজনীতির অদৃশ্য টানাপোড়েন
কাঁঠালিচাঁপার গাছের এই ঘটনা বাংলাদেশে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের নেত্রী—খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার দীর্ঘ রাজনৈতিক বৈরিতার একটি প্রতীকী দৃষ্টান্ত হিসেবে অনেকের কাছে এখনও আলোচ্য।
রাজনীতির প্রচণ্ড উত্তাপে ঢাকা এই দেশে কখনও কখনও একটি ফুলের প্রসঙ্গও হয়ে ওঠে স্মৃতি, বেদনাবোধ আর রাজনৈতিক প্রতীকবাদের অংশ।