নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ৮০তম জন্মদিন আজ বুধবার (১ অক্টোবর)। তিনি ১৯৪৬ সালের ১ অক্টোবর কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার গয়েশপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ড. মোশাররফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, গবেষক, প্রথিতযশা ভূ-বিজ্ঞানী, লেখক ও কলামিস্ট।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ও কর্মবহুল জীবনে তার ঝুলিতে অর্জনের ভাণ্ডার বিশাল। তিন মেয়াদে মন্ত্রী ও চারবার এমপি থাকাকালে নির্বাচনী এলাকায় দাউদকান্দি পৌরসভা ও নতুন উপজেলা তিতাস প্রতিষ্ঠা, মেঘনা উপজেলা বাস্তবায়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুৎ, রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ, গ্রামীণ অবকাঠামো খাতসহ সর্বক্ষেত্রে সহস্রাধিক কোটি টাকার যুগান্তকারী উন্নয়ন করেছেন। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন ও মৎস্য খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য তিনি দেশ-বিদেশে স্বর্ণপদকসহ প্রচুর সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
ড. মোশাররফ ১৯৯১—১৯৯৬ মেয়াদে বিএনপি সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী, ১৯৯৬ সালে স্বল্প মেয়াদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ২০০১-০৬ মেয়াদে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
আলোকিত সমাজ গঠনের মহান ব্রত নিয়ে তিনি নিজ নামে প্রতিষ্ঠা করেন, ড. মোশাররফ ফাউন্ডেশন। এর উদ্যোগে ২টি কলেজ, ২টি হাইস্কুল, ১টি গার্লস হাইস্কুল, ১টি দাখিল মাদরাসা, ১টি নূরানী মাদরাসা ও এতিমখানা কমকমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করেছেন।
ড. মোশাররফ কুমিল্লার দাউদকান্দি হাইস্কুল থেকে ১৯৬২ সালে মেট্রিকুলেশন, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে ১৯৬৪ সালে আইএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৮ সালে এমএসসি ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূ-তত্ত্ব বিভাগে জুনিয়র প্রভাষক পদে যোগ দেন এবং একই বছর কলম্বোপ্লান স্কলারশিপ নিয়ে উচ্চতর শিক্ষার (পিএইচডি) জন্য লন্ডন (বিলেত) যান করেন। তিনি ১৯৭০ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে এমএসসি, ১৯৭৩ সালে ডিআইসি ডিপ্লোমা এবং ১৯৭৪ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন।
১৯৭৫ সালে বিলেত থেকে দেশে ফিরে পুনরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেন এবং পর্যায়ক্রমে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। ১৯৮৭ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূ-তত্ত্ব বিভাগে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ১৯৬৪-৬৫ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের এজিএস এবং ১৯৬৭-৬৮ শিক্ষাবর্ষে হাজী মুহাম্মদ মহসিন হলের ভিপি নির্বাচিত হন।
মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে বিশ্বজনমত সৃষ্টির জন্য খন্দকার মোশাররফ ১৯৭১ সালে বিলাত প্রবাসী বাঙালিদের সংগঠিত করেন এবং ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক হিসাবে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দেন।
ড.মোশাররফ বিভিন্ন সরকারের প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। তিনি মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক রাজনৈতিক মামলায় ১৯৮৬, ১৯৯৬, ২০০৭,২০১২ এবং ২০১৪ সালে গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় ৫ বছর কারাভোগ করেন।
২০০৩ সালে তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৫৭ তম সম্মেলনের সভাপতি নির্বাচিত হন। তার সভাপতিত্বে ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) গৃহীত হয়। বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন এবং বিশ্বব্যাপী তামাক বিরোধী আন্দোলনে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ড.মোশাররফকে ‘World no tobacco award-2004’ পদকে ভূষিত করেন। ভূ—তত্ত্ব বিষয়ে স্ট্রাকচারাল এ্যানালাইসিসে তাঁর মৌলিক উদ্ভাবন ‘Hossains method of extension’ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের লেখা ‘মুক্তিযুদ্ধে বিলাত প্রবাসীদের অবদান’, ‘প্লাবণ ভূমিতে মৎস্য চাষ: দাউদকান্দি মডেল’, ‘সংসদে কথা বলা যায়’, ‘এই সময়ের কিছু কথা’,’ ‘ফখরুদ্দিন— মইন উদ্দিনের কারাগারে ৬১৬ দিন’, ‘রাজনীতির হালচাল’, ‘সময়ের ভাবনা’, ‘জরুরী আইনের সরকারের দুই বছর (২০০৭ ও ২০০৮)’ ‘মূল্যবোধ অবক্ষয়ের খণ্ডচিত্র’, ‘প্রগতি ও সত্যের সন্ধানে’, ‘করোনাকালে বাংলাদেশ: সংক্রমণের দশ মাস’, ‘স্মৃতির অ্যালবাম’ এবং ‘আমার রাজনীতির রোজনামচা’ নামের ১৩টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ২ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানের জনক।