প্রতিবেদক: কাজল , ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন কলেজ প্রাঙ্গণে আজ দুপুরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। দুপুর ১টা ৬ মিনিটে ঘটনার সময় কলেজ চত্বরে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল বেশ ঘন। বিধ্বস্তের সাথে সাথেই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে এবং বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী। ঘটনাস্থলে আতঙ্ক, আর্তনাদ এবং হাহাকারের সৃষ্টি হয়।
জানা যায়, বিধ্বস্ত বিমানটি ছিল বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এফ-৭ বিজিআই (F-7 BGI) মডেলের একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান। এই বিমানে দায়িত্বে থাকা পাইলট, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর, ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুতে গোটা জাতি শোকাহত এবং বিমান বাহিনী এক অনন্য সাহসী যোদ্ধাকে হারাল।
বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী প্রায় ১০০–১২৫ জন ব্যক্তি আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অন্তত ২০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের উদ্ধার করে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, লুবানা হাসপাতালে এবং বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।
বিধ্বস্তের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের নয়টি ইউনিট, সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), পুলিশ এবং সিভিল ডিফেন্সের দল তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণ ও উদ্ধারকাজ শুরু করে। প্রায় দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে আসে।
সরকার ও প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহল থেকে দুর্ঘটনার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাইলটের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন এবং আহতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। ইতোমধ্যে বিমান বাহিনী এবং সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, যারা বিমান দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ নিরূপণ করবে।
এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বরং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও উড্ডয়ন নিরাপত্তা বিশ্লেষণের দিক থেকে এক গুরুত্ববহ ইঙ্গিত দিয়ে গেল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুলেছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো ইতোমধ্যে ঘটনাটি গুরুত্বসহকারে প্রচার করেছে।
দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি এখন তদন্তের ফলাফলের দিকে। পাইলটের প্রতি শ্রদ্ধা ও আহতদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে জনগণ অপেক্ষা করছে—এই দুর্ঘটনা থেকে কী শিক্ষা নেওয়া হবে এবং ভবিষ্যতে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত বিপর্যয় রোধে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শেষ কথা:
সাহসী পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর-এর আত্মত্যাগ জাতির জন্য এক গভীর বেদনার স্মারক। তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত দেশ, এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনায় প্রার্থনায় নত হয়েছে কোটি মানুষ। এ দুর্ঘটনার তদন্তে গঠিত উচ্চপর্যায়ের কমিটি যেন স্বচ্ছতা ও নির্ভুলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে—এটাই এখন সবার প্রত্যাশা।