স্টাফ রিপোর্টার : কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায় এমন একদল মানুষ আছেন, যারা নিঃস্বার্থভাবে যুগ ধরে মানুষের শেষ বিদায়ের সঙ্গী হচ্ছেন। শাকিল, পলাশ ও তাদের কবর খোঁড়ার দলটি দাউদকান্দি পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের সবজিকান্দি গ্রামের এই যুবকেরা। বিনা পারিশ্রমিকে দীর্ঘ এক যুগ, অর্থাৎ ১২ বছর ধরে তারা এই পুণ্য কাজ করে আসছেন শুধুমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে।
এলাকায় কারও মৃত্যুর খবর কানে এলেই আর দেরি করেন না শাকিল, পলাশ ও তাদের দলের সদস্যরা। খুন্তি, কোদাল, দা, চাকু, স্কেল, করাতসহ কবর খোঁড়ার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে তারা তড়িঘড়ি করে ছুটে যান মৃত ব্যক্তির বাড়িতে। সেখানে পৌঁছে তারা মৃতের স্বজনদের পাশে দাঁড়ান এবং বাঁশ কাটা থেকে শুরু করে কবর খোঁড়া ও দাফন সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত সমস্ত কাজে সহযোগিতা করেন।
এই দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হলেন মু. পলাশ। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে তিনি এই সেবামূলক কাজটি করে আসছেন। তার হাতের ছোঁয়ায় অসংখ্য মানুষের শেষ ঠিকানা হয়েছে সুন্দর ও নিখুঁত। পলাশের এই সুনিপুণ দক্ষতার সুনাম নিজ এলাকাসহ আশপাশের গ্রামগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে। সমাজের তথাকথিত বিত্তবানরা যেখানে নামমাত্র সমাজসেবক হিসেবে পরিচিতি পেতে চান, সেখানে পলাশ নীরবে-নিভৃতে মানবতার এই চমৎকার কল্যাণমুখী কাজটি নিষ্ঠার সাথে পালন করে যাচ্ছেন। পলাশের মতে, সমাজের ভালো কাজে অংশগ্রহণ করতে পারাটাই তার কাছে বড় প্রাপ্তি।
এলাকাবাসী মু. পলাশ সম্পর্কে অত্যন্ত উচ্চ ধারণা পোষণ করেন। তারা জানান, “মু. পলাশ খুব সহজ-সরল এবং ভালো মনের একজন মানুষ। বর্তমান সময়ে যেখানে ব্যক্তিগত স্বার্থ ছাড়া কাউকে কোনো কাজে পাওয়া যায় না, সেখানে পলাশ ভাইয়ের মতো মানুষ খুঁজে পাওয়া সত্যিই বিরল। তিনি বিনা পারিশ্রমিকে মানুষের বাড়িতে গিয়ে কবর খুঁড়ে দিয়ে আসেন, যা এক কথায় অবিশ্বাস্য।”
এই নিঃস্বার্থ সেবার পেছনের কারণ জানতে চাইলে মু. পলাশ মিয়া বলেন, “একটা মানুষ সবকিছু ফেলে দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার পর যখন আর কিছুই থাকে না, তখন তার শেষ ঠিকানাটা একটু সুন্দর হোক- এটাই আমি সব সময় চাই। টাকা-পয়সার জন্য আমি কবর খুঁড়ি না, বরং মনের শান্তি আর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই এই কাজ করি।”
শাকিল, পলাশ ও তাদের দলের এই নিঃস্বার্থ উদ্যোগ সমাজে মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তাদের এই নীরব সাধনা প্রমাণ করে যে, অর্থ বা খ্যাতির ঊর্ধ্বেও মানুষের জন্য কিছু করার ব্রত আজও কিছু মানুষের হৃদয়ে অমলিন। তাদের এই কাজ অন্যদেরও পরোপকারে উৎসাহিত করবে বলে আশা করা যায়। এই দলটি যেন সমাজের বুকে এক চিলতে নির্মল আলোর দিশারী।