এস এম শাহ্ জালাল সাইফুল : কিছু বিদায় বড় বেশি নিঃশব্দ হয়, কিন্তু তার রেশ থেকে যায় হৃদয়ের গভীরে দীর্ঘদিন। জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমানের জীবন যেন ঠিক তেমনই এক বিষাদসিন্ধুর গল্প।
খুব অল্প বয়সেই তারা হারিয়েছিল তাদের প্রিয় বাবা আরাফাত রহমান কোকোকে। বাবার আদর-ভালোবাসা কী, তা বোঝার আগেই নিয়তি কেড়ে নেয় সেই নিরাপদ আশ্রয়। বাবাহীন এই দুই শিশুর জীবনে তখন বটগাছের মতো ছায়া হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তাদের দাদী—বেগম খালেদা জিয়া।
বাবা হারানো নাতি-নাতনিদের কাছে দাদীই ছিলেন শেষ ভরসা, শেষ আশ্রয়। দাদীর আঁচলের তলাতেই তারা খুঁজে পেত বাবার অভাব পূরণের এক উষ্ণ স্নেহ। অল্প বয়সে সন্তান হারানো এক দাদীর কাছে নাতিরা ছিল বড্ড শখের, বড্ড আদরের।
মানুষ সাধারণত শাশুড়ি-পুত্রবধূর সম্পর্ক নিয়ে নানা কথা বলে। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া ও শর্মিলা রহমান সিঁথির সম্পর্ক ছিল সেসব গণ্ডির অনেক ঊর্ধ্বে—একেবারে মা ও মেয়ের মতো। বড় ছেলে তারেক রহমান দেশের বাইরে, ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর অকালে চলে যাওয়া—এই চরম একাকীত্বের সময়ে শর্মিলা রহমানই ছিলেন খালেদা জিয়ার সবচেয়ে বড় অবলম্বন।
দুই নারীই ভাগ্যের এক নির্মম মিলনে অল্প বয়সে বিধবা। প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী হিসেবে সন্তানদের প্রতি শর্মিলা রহমান সিঁথির দায়িত্ববোধ ছিল আরও গভীর ও দৃঢ়। দুঃখ আর সংগ্রামের পথে তারা একে অপরের শক্তি হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন দীর্ঘ সময়।
কিন্তু আজ সেই বটগাছের ছায়াটিও নেই। যে দাদী এতিম নাতি-নাতনিদের আগলে রেখেছিলেন, তিনিও চলে গেছেন না ফেরার দেশে। ফলে জাফিয়া ও জাহিয়ার জীবনে নেমে এসেছে এক গভীর শূন্যতা—যা কোনো কিছু দিয়েই পূরণ হওয়ার নয়।
নিয়তির নির্মম পরিহাস—যাদের জীবনের ওপর দিয়ে একের পর এক ঝড় বয়ে গেছে, আজ তাদের শান্ত করার মতো ছায়াটিও আর অবশিষ্ট নেই।
আল্লাহ তায়ালা এই শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করার শক্তি দান করুন। আমিন।