বঙ্গ নিউজ বিডি প্রতিবেদক : রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যার পর থেকে বিএনপির কঠিন সময়, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দীর্ঘ সংগ্রামে বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন আপসহীন নেতৃত্বের প্রতীক। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি কোনো আপসে যাননি, জনগণের সঙ্গেই থেকেছেন—এ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে লাখো মানুষের সামনে আবেগঘন বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি উল্লেখ করেন, নানা প্রতিকূলতা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে বেগম খালেদা জিয়া বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শহীদ হওয়ার পর বিএনপি এক কঠিন সময়ের মুখোমুখি হয়। সেই প্রেক্ষাপটে ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন খালেদা জিয়া। ভাইস চেয়ারম্যান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং পরবর্তীতে দলের কাউন্সিলে নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
৪৩ বছরের রাজনৈতিক জীবনের মধ্যে টানা ৪১ বছরই তিনি বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বে ছিলেন। স্বৈরশাসক এরশাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ বছরের আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন। সেই আন্দোলনের ফলেই ১৯৯১ সালে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে এবং বেগম খালেদা জিয়া তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
জানাজায় উপস্থিত লাখো মানুষের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন,
“খালেদা জিয়াকে তাঁর জীবনের শেষ পর্যন্ত কেউ আপসে বাধ্য করতে পারেনি। তিনি জনগণের সঙ্গেই থেকেছেন। তিনি বলতেন—বিদেশে আমাদের বন্ধু আছে, প্রভু নেই।”
তিনি আরও বলেন,
“আমার মা বেগম খালেদা জিয়া জীবিত থাকা অবস্থায় যদি কারও কাছে কোনো ঋণ নিয়ে থাকেন, দয়া করে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন—আমি তা পরিশোধ করব। একই সঙ্গে তাঁর কোনো কথা বা ব্যবহারে কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে মরহুমার পক্ষ থেকে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আপনারা দোয়া করবেন, আল্লাহ যেন তাঁকে বেহেশত নসিব করেন।”
তারেক রহমানের বক্তব্যের পর বিকেল ৩টার দিকে জানাজা শুরু হয়। জানাজায় ইমামতি করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি মোহাম্মদ আবদুল মালেক। জানাজা শেষে জাতীয় পতাকায় মোড়ানো কফিন বহনকারী গাড়ি রাজধানীর জিয়া উদ্যানের উদ্দেশে রওনা হয়।
জিয়া উদ্যানে তাঁর স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই বেগম খালেদা জিয়াকে দাফন করা হবে। রাষ্ট্রনায়কের এই শেষযাত্রায় লাখো মানুষের উপস্থিতি পরিণত হয় এক গভীর শোক ও শ্রদ্ধার জনসমুদ্রে।