বঙ্গ নিউজ বিডি প্রতিনিধি : ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে শনিবার (২০ ডিসেম্বর) একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ ঘোষণা দেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শোক দিবসে দেশের সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। এছাড়া শুক্রবার দেশের সব মসজিদ, মন্দিরসহ ধর্মীয় উপাসনালয়ে মরহুম হাদির আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ প্রার্থনা করা হবে। এতে সবাইকে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা আরও জানান, ওসমান হাদির স্ত্রী ও সন্তানের দায়িত্ব সরকার গ্রহণ করবে। একইসঙ্গে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। এ বিষয়ে কোনো ধরনের শিথিলতা দেখানো হবে না বলেও দৃঢ় আশ্বাস দেন তিনি।
এর আগে গুলিবিদ্ধ হয়ে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে মারা যান শরিফ ওসমান হাদি। মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে ইনকিলাব মঞ্চ।
জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারণার সময় গত ২০ ডিসেম্বর দুপুরে তাকে গুলি করা হয়। গুলি মাথা ভেদ করে যাওয়ায় তিনি গুরুতর আহত হন। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়, পরে এভারকেয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। তিন দিন পর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। সেখানে কয়েকদিন চিকিৎসা চললেও তার অবস্থার আর উন্নতি হয়নি।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণকারী হিসেবে ফয়সাল করিম মাসুদকে শনাক্ত করা হয়েছে। তার সহযোগী হিসেবে মোটরসাইকেল চালক আলমগীর শেখ জড়িত ছিলেন। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তারা অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন।
এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত পুলিশ ও র্যাব ১৪ জনকে আটক ও গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছেন ফয়সালের বাবা মো. হুমায়ুন কবির (৭০), মা মোসা. হাসি বেগম (৬০), স্ত্রী সাহেদা পারভিন সামিয়া ও শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপু।
এছাড়া আরও গ্রেপ্তার হয়েছেন মো. নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বল, মো. কবির, আব্দুল হান্নান, মো. হিরন, মো. রাজ্জাক, ফয়সালের বান্ধবী মারিয়া আক্তার এবং হালুয়াঘাট সীমান্ত এলাকার মানব পাচারকারী হিসেবে পরিচিত সিমিরন দিও ও সঞ্জয় চিসিম।
উল্লেখ্য, গুলিবিদ্ধ হওয়ার প্রায় এক মাস আগেই হত্যার হুমকি পাওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন শরিফ ওসমান হাদি। গত নভেম্বরে দেওয়া এক ফেসবুক পোস্টে তিনি জানান, দেশি-বিদেশি অন্তত ৩০টি নম্বর থেকে তাকে ফোন ও মেসেজ দিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। পোস্টে তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগের ‘খুনি’ সমর্থকেরা তাকে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখছে। তবে জীবননাশের আশঙ্কা সত্ত্বেও ‘ইনসাফের লড়াই’ থেকে সরে দাঁড়াবেন না বলেও তিনি উল্লেখ করেছিলেন।