এস এম শাহ্ জালাল সাইফুল : বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের মতো ব্যক্তিগত জীবনও নানা দুঃখ-কষ্টে জর্জরিত। দশ বছর আগে ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকে হারান তিনি। আর বড় ছেলে তারেক রহমান প্রায় সতেরো বছর ধরেই রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা ও হয়রানির কারণে মায়ের কাছ থেকে দূরে, বিদেশে অবস্থান করছেন।
এক ছেলেকে হারানোর শোক, আরেক ছেলের দীর্ঘ বিচ্ছেদ—সব মিলিয়ে মমতাময়ী মায়ের জীবনে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, সেই সময়গুলোতে দুই পুত্রবধূই আজ তাঁর পাশে এক অটুট শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছেন। নিজের সন্তানদের মতোই দায়িত্ব ও ভালোবাসায় তাঁরা বেগম জিয়ার সার্বক্ষণিক দেখভাল করছেন।
শর্মিলা রহমান—একান্ত সেবায় দিন-রাত পাশে
ছোট ছেলে কোকো মারা যাওয়ার পর থেকেই তাঁর স্ত্রী শর্মিলা রহমান প্রায় অবিচ্ছিন্নভাবে শাশুড়ির পাশে আছেন। খালেদা জিয়ার অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ার পর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা, প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত, সেবাযত্ন—সবকিছুতেই তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন।
তাঁর উপস্থিতি খালেদা জিয়ার মানসিক শক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি পুরো পরিবারকে একটি নিরাপদ আশ্বাসও দিচ্ছে।
ড. জোবাইদা রহমান—চিকিৎসার জন্য দেশ ছুটে আসা, মুহূর্তের জন্যও স্বস্তি নেই
একইভাবে বড় ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী ড. জোবাইদা রহমানও শাশুড়ির চিকিৎসা-ইস্যুতে দৌড়ঝাঁপে ব্যস্ত সময় পার করছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নেওয়ার প্রস্তুতি থেকে শুরু করে চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা, রিপোর্ট পর্যালোচনা, চিকিৎসা পরিকল্পনা—সবকিছুতেই তিনি সরাসরি যুক্ত।
দেশে ফিরে সব কিছু সমন্বয় করতে গিয়ে তিনি যেন এক মুহূর্তের জন্যও স্বস্তি পাচ্ছেন না।
অন্যদিকে দূর দেশে অসহায়ের মতো অপেক্ষায় তারেক রহমান
মায়ের শারীরিক অবস্থা ক্রমেই খারাপের দিকে যাওয়ায় বড় ছেলে তারেক রহমান স্বাভাবিকভাবেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। কিন্তু দেশে আসতে না পারার বাধা তাঁকে আরও অসহায় করে তুলেছে। দূরদেশে বসে প্রতিটি মুহূর্তে তিনি শুধু মায়ের জন্য অপেক্ষা করছেন—ন্যূনতম কাছে গিয়ে হাত ধরতে না পারার বেদনায়।
পরিবারের সংকটে দুই পুত্রবধূই এখন ভরসার নাম
খালেদা জিয়ার এখনকার চিকিৎসা, মানসিক শক্তি এবং ব্যক্তিগত সেবাযত্ন—সব মিলিয়ে দুই পুত্রবধূই হয়ে উঠেছেন তাঁর ভরসা, শক্তি ও পরম আশ্রয়। তাদের এই নিঃস্বার্থ দায়িত্ব পালন রাজনৈতিক পরিবারটির জন্য এক মানবিক দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।