নিজস্ব প্রতিনিধি : বাংলাদেশের স্পিনিং শিল্পে জড়িত লক্ষ লক্ষ শ্রমিক–কর্মচারীর চাকরি রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে সরকারি নীতি–সহায়তার দাবি জানিয়েছে স্পিনিং মিল মালিক ও শিল্প উদ্যোক্তারা। আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
বক্তারা বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পের অন্যতম ভিত্তি হল দেশের স্পিনিং সেক্টর। কাঁচা তুলা থেকে সুতা উৎপাদন, দক্ষ জনশক্তির ব্যবহার, আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ—সব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতিতে এই সেক্টরের অবদান অপরিসীম। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈশ্বিক সংকট, জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধি, ডলার–অস্থিতিশীলতা এবং নীতিগত চাপের কারণে সেক্টরটি টিকে থাকার লড়াই করছে।
৪০টির বেশি মিল বন্ধ, লাখো শ্রমিক জীবিকা সংকটে
শিল্প মালিকদের দাবি,
কোভিড পরবর্তী ক্ষতি,
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ সংকট,
ডলার সংকট,
গ্যাস–বিদ্যুতের অতিরিক্ত দাম,
বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা
এসব কারণে উৎপাদন ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। ফলে দেশজুড়ে ৪০টিরও বেশি স্পিনিং মিল বন্ধ হয়ে গেছে এবং হাজারো শ্রমিক-কর্মচারী বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
চলমান মিলগুলোও ৫০–৬০% সক্ষমতায় উৎপাদন করছে, যা শিল্পটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিচ্ছে।
সরকারের কাছে সাত দফা দাবি
সংবাদ সম্মেলনে শিল্প প্রতিনিধিরা স্পিনিং শিল্প বাঁচাতে নিম্নোক্ত ৭টি দাবি উপস্থাপন করেন—
১. গার্মেন্টস সেক্টরে ক্যাশ ইনসেনটিভ পুনরায় ৫% করা
পূর্বের ৫% প্রণোদনা হঠাৎ কমিয়ে ১.৫% করায় RMG–স্পিনিং উভয় সেক্টরই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগের হারে প্রণোদনা পুনঃবহালের দাবি করা হয়।
২. গ্যাস–বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি পুনর্বিবেচনা
গত সরকার পরপর তিন দফায় ৩৫৫% পর্যন্ত জ্বালানি মূল্য বাড়িয়েছে।
উৎপাদন ব্যয় বাড়লেও বাজারে বিক্রয়মূল্য সমন্বয় হয়নি—ফলে মিলগুলো টিকে থাকতে পারছে না।
৩. বিদেশি কমদামের সুতা আমদানিতে কঠোর মনিটরিং
প্রণোদনার কারণে কিছু দেশ অত্যন্ত কমদামে সুতা রপ্তানি করছে, যা স্থানীয় উৎপাদকদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
অতএব এন্টি-ডাম্পিং ডিউটি ও কড়া মনিটরিং চালুর দাবি জানানো হয়।
৪. UDF ফান্ড দুই বছরের জন্য পুনরায় চালু করা
বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ বিলিয়ন ডলারের UDF ফান্ড আগে মিলগুলোকে আমদানি সংযোগ সুবিধা দিয়েছে।
বর্তমান সংকট মোকাবিলায় এই সুবিধা পুনরায় দুই বছরের জন্য চালুর দাবি করা হয়।
৫. রপ্তানি প্রণোদনার ক্ষেত্রে ৭০% স্থানীয় কাঁচামাল ব্যবহারে বিশেষ সুবিধা
রপ্তানি খাতে স্থানীয় কাঁচামাল ব্যবহারে অতিরিক্ত নীতি সুবিধা প্রদানের দাবি জানানো হয়।
৬. স্পিনিং মিল আধুনিকীকরণে ৫% সুদে ১০ বছরের বিশেষ ঋণ প্যাকেজ
উৎপাদন বাড়াতে পুরোনো যন্ত্রপাতি বদলে আধুনিক মেশিন স্থাপনের জন্য কম সুদের দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সুবিধার অনুরোধ জানানো হয়।
৭. আমদানি সক্ষমতা বৃদ্ধি করে মিলগুলোর পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতা ফিরিয়ে আনা
বর্তমানে মিলগুলো অর্ধেক সক্ষমতায় চলছে। তাই পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে আমদানি ক্ষমতা বাড়ানোর দাবি করা হয়।
উপস্থিত ছিলেন যাঁরা
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন—
ইঞ্জিনিয়ার আজহার আলী, সিইও, সালমা গ্রুপ
ইঞ্জিনিয়ার এবিএম হিরাজুল ইসলাম, পরিচালক, যমুনা গ্রুপ
ইঞ্জিনিয়ার শাহিনুল হক, পরিচালক, বরিশাল এইচ কে মোশারফ কম্পোজিট
ইঞ্জিনিয়ার শান্তিময় দত্ত, অ্যাডভাইজার, আহমেদ গ্রুপ
আবুল কালাম আজাদ, পরিচালক, আরমান গ্রুপ
মোহাম্মদ রুহুল আমিন, নির্বাহী পরিচালক, গ্রীনটেক্স মিলস
পরিশেষে
শিল্প প্রতিনিধিরা বলেন, স্পিনিং সেক্টর বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। এই শিল্পকে রক্ষায় সরকারের জরুরি নীতি-সহায়তা না পেলে সেক্টরটি ধ্বংস হয়ে যাবে, যা জাতীয় অর্থনীতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হবে।