লন্ডন প্রতিনিধি : বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এখনো অব্যাহত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, অতীতে যারা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে, তারাই আজও সক্রিয় রয়েছে। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় লন্ডনে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তারেক রহমান।
তিনি বলেন, “এক বছর আগে আমি যা বলেছিলাম, আজ বাস্তবতা সেটিরই প্রতিফলন। ১৯৭১ সালে যারা ষড়যন্ত্র করেছিল, ১৯৭৫ সালের নভেম্বর, ১৯৮১, ১৯৯৬ সালসহ বিভিন্ন সময়ে যারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল, তারাই আজও সক্রিয়। তাই বিএনপির প্রতিটি নেতা-কর্মীর দায়িত্ব হলো দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এসব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকা।”
বিজয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, “আজ ১৬ ডিসেম্বর—আমাদের মহান বিজয় দিবস। একইসঙ্গে দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর আপনাদের সঙ্গে ছিলাম। ইনশাআল্লাহ আগামী ২৫ ডিসেম্বর আমি দেশে ফিরে যাচ্ছি।”
তার এ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে মিলনায়তনে উপস্থিত নেতা-কর্মীরা হর্ষধ্বনি দেন। তবে তিনি যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে অনুরোধ জানান, বিদায়ের দিন যেন কেউ বিমানবন্দরে উপস্থিত না হন। তিনি বলেন, এতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে এবং দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন কোনো একক রাজনৈতিক দলের কৃতিত্ব নয়; এটি বাংলাদেশের সব মানুষের সম্মিলিত অর্জন। ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, নারী ও শিশু—সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণেই স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়েছে।
তিনি বলেন, “২০২৪ সালের গণ-আন্দোলনের সফলতা একটি অধ্যায় মাত্র। সেই বিজয় ধরে রাখা আরও কঠিন। জনগণের ঐক্যই এই অর্জনকে টিকিয়ে রাখতে পারে।”
আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জনগণের সমর্থন পেলে বিএনপি সরকার গঠন করতে সক্ষম হবে। সরকার গঠন করতে পারলে জনগণের কাছে জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতা বজায় রাখা হবে বলেও তিনি অঙ্গীকার করেন।
দেশের বর্তমান সংকটের চিত্র তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, ব্যাংকিং ও শিল্প খাত গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এসব খাতে বিএনপির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ থাকলেও জনগণের সমর্থন ও জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে তা মোকাবিলা করা সম্ভব।
তিনি বলেন, “আমি কোনো স্বপ্নের মধ্যে নেই, আমি একটি পরিকল্পনার মধ্যে আছি।” বিএনপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে তিনি জানান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও কর্মসংস্থান খাতে বড় ধরনের সংস্কার আনা হবে। আধুনিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষাব্যবস্থা, জনস্বাস্থ্যভিত্তিক চিকিৎসা ব্যবস্থা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সহায়তা, যুব কর্মসংস্থান ও প্রবাসীদের বিনিয়োগে উৎসাহ দেওয়া হবে।
তিনি দাবি করেন, এসব উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে ছয় মাসের মধ্যেই জনগণ সুফল দেখতে পাবে।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবদানের কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে প্রবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তিনি যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য দোয়া কামনা করেন।
এর আগে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ২০২৪ সালের গণ-আন্দোলনের শহীদদের মাগফিরাত কামনা এবং বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির নবগঠিত আংশিক কমিটির আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ। সদস্যসচিব খসরুজ্জামান খসরু সঞ্চালনা করেন। এতে যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ মালেক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।