বঙ্গ নিউজ বিডি প্রতিনিধি : দেশের রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনায় এসেছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরা ও তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে বিতর্ক। অনেকেই দাবি করছেন, দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকার কারণে তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে বিশ্ব ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস বলছে—দূরে থাকা মানেই নেতৃত্ব শেষ হয়ে যাওয়া নয়; বরং অনেক সময় দূরত্বই নেতাদের আরও শক্ত অবস্থানে ফিরিয়ে আনে।
১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমান নির্মমভাবে নিহত হওয়ার সময় তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা ছিলেন দেশের বাইরে। বাবার লাশ দেখার সুযোগও পাননি, দেশে ফিরতেও পারেননি। কিন্তু সেখান থেকেই তিনি ফিরে এসে দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।
একইভাবে আজ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মৃত্যুশয্যায় লড়ছেন এবং তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমান নিরাপত্তাজনিত ও আইনগত কারণবশত দেশে ফিরতে পারছেন না—এটাই বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা। এটিকে ‘নাটক’ বলার কোনও ভিত্তি নেই; ইতিহাসও এমন অবস্থায় নেতাদের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায়—এমন উদাহরণ দেয় না।
বিশ্ব রাজনীতির দৃষ্টান্তেও দেখা যায়—
আউং সান সু চি স্বামীর মৃত্যুশয্যায় পাশে থাকতে পারেননি, তবুও তিনি মিয়ানমারের ইতিহাসে এক অনন্য রাজনৈতিক আইকন হয়েই রয়ে গেছেন।
মহাত্মা গান্ধী স্ত্রী কস্তুরবার শেষ বিদায় দেখতে পারেননি, কিন্তু তার নেতৃত্ব আরও প্রভাবশালী হয়েছে।
ইয়াসের আরাফাত বছরের পর বছর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থেকেছেন, অথচ তাঁর রাজনৈতিক শক্তি কমেনি।
শেখ রেহানা, পুরো পরিবার হারানোর পরও দীর্ঘ সময় দেশে ফিরতে পারেননি, তবুও ইতিহাসের শক্ত সাক্ষী হিসেবে আজও সমাদৃত।
ইন্দিরা গান্ধী ছেলের মৃত্যুর মুহূর্তেও পাশে থাকতে পারেননি, কিন্তু ভারতের রাজনীতিতে তাঁর অবস্থান ছিল অটুট।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাই ‘দূরে থাকলে নেতা শেষ হয়ে যায়’—এমন ধারণা টেকে না। এখানে নেতৃত্বকে থামাতে পারে শোক, দমন–পীড়ন বা মৃত্যুঝুঁকি—কিন্তু শারীরিক দূরত্ব নয়।
তারেক রহমান আজ দেশে নেই—ঠিক।
কিন্তু ইতিহাস বলে—
দূরত্ব কখনো নেতৃত্বকে থামাতে পারে না; বরং নেতারা প্রায়ই ফিরে আসেন আরও শক্ত হয়ে।