বঙ্গ নিউজ বিডি জেলা প্রতিনিধি, ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলার ঘটনায় ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ছোট ভাই ও ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিন উপর হামলা এবং তার গাড়ি ভাঙচুরের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ।
রোববার (১৩ জুলাই) বিকালে ঠাকুরগাঁও শহরের কালিবাড়িতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের বাড়িতে এবিষয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন জেলা বিএনপি।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মো. পয়গাম আলী লিখিত বক্তব্যে বলেন, সম্মেলন একটি দলীয় গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। সম্মেলনে পরবর্তী দুই বছরের জন্য কাউন্সিলরদের মতামত/সমর্থনের ভিত্তিতে নেতৃত্ব নির্বাচিত করা হয়। যেহেতু দল একটি সাংগঠনিক পরিবার সেহেতু সকলের ঐক্য, সৌহার্দ্য রক্ষার স্বার্থে সাধারণত দলীয় সম্মেলনে দলে অবদান ও সমঝোতার মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের চেষ্টা বা প্রক্রিয়া করা হয়। এরপর কোন কারনে সমঝোতা ব্যর্থ হলে সরাসরি নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নেতৃত্ত্ব নির্বাচন করা হয়।
কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক গতকাল বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপি সম্মেলনে ১ম অধিবেশনের সংক্ষিপ্ত কার্যক্রম শেষে জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক জনাব মো: পয়গাম আলীর সভাপতিত্বে ২য় অধিবেশনের কার্যক্রম ও নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে দুপুর ২:৩০ মিনিটে ভোটের যাবতীয় কার্যক্রম শুরু হয় এবং কাউন্সিলরদের স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহনে অত্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে বিকাল ৪.৩০ মিনিট পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহন শেষ হয়। ৪৯০টি ভোটের মধ্যে ৪৮৮টি ভোট কাষ্ট হয় যা প্রায় শতভাগ।
ভোট গ্রহন শেষে যথারীতি সমীর উদ্দিন স্মৃতি ডিগ্রি কলেজের ৩য় তলার একটি কক্ষে প্রার্থী এবং পুলিং এজেন্টদের উপস্থিতিতে ভোট গণনা শুরু হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে গণনায় সভাপতি পদে এ্যাড. মোঃ সৈয়দ আলম ছাতা মার্কায় ২৪১টি ভোট এবং আবু হায়াত নুরুন্নবীর চেয়ার মার্কায় ২৪২টি ভোট পাওয়া যায়।
গণনাকালে ০৪টি বাতিল ভোট এবং ০১টি ভোট চশমা মার্কায় পাওয়া যায়। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক দায়িত্বরত নেতৃবৃন্দ পূণরায় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাইকালে বাতিলকৃত ০৪টি ভোট হতে ০১টি ভোট ছাতা মার্কার পক্ষে গৃহিত হয় এবং সর্বশেষ ছাতা মার্কা ও চেয়ার মার্কা সমান সংখ্যক ২৪২টি ভোট গণনায় পাওয়া যায়। গণনাকালে উভয় প্রার্থীদ্বয়ের এজেন্টগণ কোনরূপ আপত্তি করেন নাই। পরবর্তীতে নির্বাচনের দায়িত্বরত নেতৃবৃন্দ অন্যান্য দুইটি পদের ভোট গণনা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেন।
তিনি বলেন, নিয়মমাফিক নির্বাচন কমিশনের আহ্বায়ক, সদস্য এবং সম্মেলনের প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দের পরবর্তী সিদ্ধান্ত ও ফলাফল ঘোষনার জন্য অপেক্ষা করা হয়। কিন্তু দুভার্গ্যজনক কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই ছাতা মার্কার প্রার্থী এ্যাড. মো: সৈয়দ আলম এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ড. টিএম মাহবুবর রহমান এর নেতৃত্ত্বে তাদের উশৃঙ্খল সমর্থকগণ গণনা কক্ষে প্রবেশ করে ব্যালট পেপার, নির্বাচনী কাগজপত্রের ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন এবং স্বাক্ষরবিহীন খসড়া ফলাফল শীট ছিনিয়ে নেন।
এক পর্যায়ে তারা চূড়ান্ত ফলাফল শীটে তাদের পক্ষে ফলাফল স্বাক্ষর করে ঘোষনা দেওয়ার জন্য নির্বাচনের দায়িত্বরত নেতৃবৃন্দকে চাপ সৃষ্টি করেন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, লাঞ্চিতসহ মেরে ফেলার হুমকি-ধামকি দেন। তাৎক্ষনিক উপজেলা প্রশাসন এবং পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যগণ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করেন কিন্তু প্রার্থী এ্যাড. মো: সৈয়দ আলম এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ড. টিএম মাহবুবর রহমানসহ তাদের সমর্থকগণ দায়িত্বরত নেতৃবৃন্দকে গণনাকক্ষে প্রায় ৪ ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন।
গণনাকক্ষ থেকে জেলা বিএনপির সম্মানিত সাধারণ সম্পাদক ও সম্মেলনের প্রধান অতিথি মির্জা ফয়সল আমিনকে সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করা হলে তিনি দলের নেতৃবৃন্দের নিরাপত্তা এবং অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত করার লক্ষে ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার উদ্দেশ্যে গণনা কক্ষে ছুটে আসেন। তিনি সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কৌশল করে নেতৃবৃন্দকে মুক্ত করে আনেন। সম্মেলনে নির্বাচনের কোন স্বাক্ষরিত ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো ঘোষনা করা হয়নি।
অতঃপর তিনি তিনতলা থেকে নিচতলায় নেমে আসার সাথে সাথে এ্যাড. মো: সৈয়দ আলম এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ড. টিএম মাহবুবর রহমানের নেতৃত্বে তাদের উশৃঙ্খল সমর্থকগণ তাকে লক্ষ করে লাঠিসোঠা চেয়ার দিয়ে হামলা এবং তাকে বহরকারী গাড়ি ভাংচুর করেন। এক পর্যায়ে জেলা থেকে আগত অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ তাকে রক্ষা করার আপ্রাণ চেষ্টা করে এবং তারাও আহত হয়। জেলা অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সহায়তায় তিনি ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ সম্মেলনস্থল ত্যাগ করেন। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জনাব মির্জা ফয়সল আমিন এবং তার গাড়িতে হামলার ঘটনা আপনারা ইতিমধ্যেই সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অবগত হয়েছেন। অদ্য দলের পক্ষ থেকে আসল ঘটনা আপনাদেরকে স্পষ্ট করা হলো।
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক সংগঠনে নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য একটি অপরীহার্য বিষয় বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের যে সকল নেতাকর্মী এই ধরনের নেক্কারজনক ও দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি এবং আইনবিরোধী কর্মকান্ড করেছেন তাদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক দলীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহনসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
বাইট- মো. পয়গাম আলী, যুগ্ম সম্পাদক, জেলা বিএনপি, ঠাকুরগাঁও।Byte- Md. Poygam Ali, Joint Secretary, District BNP, Thakurgaon.
জাকির মোস্তাফিজ মিলু