বঙ্গ নিউজ বিডি প্রতিনিধি : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতিটি নির্বাচনী মিছিলে তিনি জনগণের সঙ্গে থাকবেন। গ্রাম-গঞ্জ, শহর-নগর, বাজার-মহল্লা থেকে শুরু করে রাজপথ—সবখানেই জনগণের আন্দোলনে তাঁর উপস্থিতি থাকবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
সোমবার মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তারেক রহমান। বক্তব্যের আগে সভাস্থলে উপস্থিত নেতাকর্মীরা স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠেন— “তারেক রহমান আসছে, বাংলাদেশ হাসছে”।
তারেক রহমান বলেন, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭৫-এর ৭ নভেম্বর, ১৯৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান—প্রতিটি আন্দোলনই প্রমাণ করেছে জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকলে বিজয় কেউ ঠেকাতে পারে না। তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, নির্ধারিত সময়েই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, জনগণকে ক্ষমতাবান করার একমাত্র পথ হলো জনগণের সরাসরি ভোটে দায়বদ্ধ সরকার প্রতিষ্ঠা। এ কারণেই বিএনপি সবসময় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে আপসহীন অবস্থানে রয়েছে।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তারেক রহমান বলেন, দেশি-বিদেশি একটি ষড়যন্ত্রকারী চক্র নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে নানা অজুহাতে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন তবুও জনগণের প্রত্যাশিত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে, কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা এখনো সক্রিয়।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রকামী শক্তির সাহসী সন্তান ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণ সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ। প্রশ্ন রেখে তারেক রহমান বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যর্থ হলে কারা লাভবান হবে? নির্বাচন না হলে কাদের স্বার্থ রক্ষা পাবে? এসব প্রশ্নের মধ্যেই ঘাতকদের পরিচয় লুকিয়ে আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে অপশক্তি তখনও সক্রিয় ছিল, এখনও রয়েছে। চরিত্র বদলালেও ষড়যন্ত্র থেমে নেই।
ভয় না পেয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, মানুষের জীবন-মৃত্যু আল্লাহর হাতে। আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চালিয়ে গেলে ষড়যন্ত্রকারীরা পিছু হটতে বাধ্য হবে।
বিজয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে তিনি বলেন, লাখো শহীদের আত্মত্যাগ আর মা-বোনদের সম্মানের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা কোনো দলের একক সম্পদ নয়। তিনি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের লেখা ‘একটি জাতির জন্ম’ প্রবন্ধকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অনন্য দলিল হিসেবে উল্লেখ করেন।
একটি চক্র স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে ‘বিজয়ের নতুন ইতিহাস’ রচনার অপচেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এ ধরনের চেষ্টা ইতিহাসের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা বলে মন্তব্য করেন তারেক রহমান।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, প্রতিশোধ নয়—বিজয়ের সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়াই বিএনপির লক্ষ্য। আসন্ন নির্বাচনে জনগণের সমর্থন ও সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন তিনি।
আগামী দশককে “রূপান্তরের দশক” হিসেবে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, নারী, তরুণ, কৃষক-শ্রমিকসহ কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে একটি স্বনির্ভর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে বিএনপি ‘দেশ গড়ার কর্মসূচি’ বাস্তবায়নে প্রস্তুত।
আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা।