বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: সিলেটের আলোচিত রায়হান হত্যার প্রধান আসামি এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া এখন কারাগারে। সেখান থেকেই নিহত রায়হানের স্ত্রীকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে তার মা ও সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেয়ার প্রস্তাবও দিয়েছেন। আকবরের এই প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছেন রায়হানের মা সালমা বেগম। তিনি বলেন, ছেলের খুনিকে আমার বউমা বিয়ে করবে কী করে।
সম্প্রতি ফেসবুক পেজে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন তথ্যই দিয়েছেন রায়হানের মা। এর আগে এক পুলিশ সদস্যের মাধ্যমে বিয়ের প্রস্তাব দেন আকবর।
সালমা বেগম বলেন, কিছুদিন আগে পুলিশের এক সদস্য আমাদের বাসায় আসেন। তিনি আরেকটি মামলায় কারাগারে ছিলেন। সেখানে আকবরের সঙ্গে তার দেখা হয় জানিয়ে ওই পুলিশ সদস্য বলেন- রায়হানের স্ত্রীকে বিয়ে করতে চান আকবর এবং আমার ও আমার নাতনির ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে চান। এ ব্যাপারে আমাদের মতামত জানতে চান ওই পুলিশ সদস্য। তবে আমরা আমাদের আপত্তির কথা তাকে জানিয়ে দিয়েছি। ছেলের খুনিকে আমার বউমা বিয়ে করবে কী করে।
বিয়ের প্রস্তাব পাঠানোর কিছুদিন পর আকবরের সঙ্গে কারাফটকে তাদের দেখা হয় জানিয়ে সালমা বেগম বলেন, সেদিন তিনি আমাদের পা ধরে ক্ষমা চান।
হত্যার ঘটনায় পুলিশের বিভাগীয় মামলায় সাক্ষ্য দিতে গত মাসে রায়হানের মা সালমা বেগম, স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নী ও সৎ বাবা হাবিবুল্লাহকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার ফটকে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় আকবরসহ অন্য আসামিদেরও তাদের সামনে হাজির করা হয়।
সালমা বেগম বলেন, ওইদিন আকবর আমার ও রায়হানের চাচার (সৎ বাবা) পা ধরে অনেকক্ষণ কান্নাকাটি করেন। তিনি ক্ষমা চেয়ে তার প্রাণভিক্ষা দেওয়ার জন্য বলেন। আমাদের সব ধরনের দায়িত্ব তিনি নেবেন বলেও জানান।
রায়হানের মা আরো বলেন, সেদিন আকবর আমাকে বলেছিল- আমরা ভুল তথ্য পেয়ে রায়হানের মতো ভালো একটি ছেলেকে নির্যাতন করেছি। আমাদের ভুল হয়েছে। আমরা বুঝতে পারিনি। আমাদের ক্ষমা করে দিন।
আকবরকে কখনো ক্ষমা করবেন না জানিয়ে সালমা বেগম বলেন, তিনি আমার নিরপরাধ ছেলেকে খুন করেছেন। তাকে আমি কখনোই ক্ষমা করব না। আমাদের ভরণপোষণের চিন্তা করতে হবে না। পারলে তিনি আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিক। রায়হান যখন মারা যায় তখন তার মেয়ে আলফার বয়স ছিল দুই মাস। সেই মেয়ে এখন বড় হয়ে উঠছে। হাঁটা শিখছে। ধীরে ধীরে কথাও ফুটছে তার মুখে।
তিনি আরো বলেন, গত ৩০ সেপ্টেম্বর মামলার কাজে আদালতে গিয়েছিলাম। এসে দেখি নাতনিটা বাবা বাবা করছে। সবসময়ই সে বাবাকে খোঁজে। কিন্তু পায় না। তার জন্য বুক ফেটে যায়। এই শিশুকে যে এতিম করেছে তাকে কী করে ক্ষমা করব।
আকবরসহ অন্যরা অপরাধ না করে থাকলে কেন ক্ষমা চাইবে- এমন প্রশ্ন তুলে রায়হানের মা বলেন, তাদের এই ক্ষমা প্রার্থনা আর বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাবই প্রমাণ করে তারা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর রাতে সিলেট নগরের আখালিয়া এলাকার যুবক রায়হান আহমদকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন ভোরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে নেয়া হয় সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে। সেখানে সকালে তিনি মারা যান। এরপর রায়হানকে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যার অভিযোগ তোলে পরিবার। ঐ ঘটনায় তার স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি মামলা করেন।
চলতি বছরের ৫ মে ঐ মামলায় পাঁচ পুলিশ সদস্যসহ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দেয় পিবিআই। ৩০ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্র গ্রহণ করে আদালত। অভিযুক্তরা হলেন- বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, এসআই হাসান উদ্দিন, এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস, হারুনুর রশিদ ও কথিত সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল নোমান।
এদিকে, রায়হানের মৃত্যুর পরই পালিয়ে যান এসআই আকবর। পরে গত বছরের ৯ নভেম্বর দুপুরে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ ইউনিয়নের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকে ভারতে পালানোর সময় তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযুক্ত পাঁচ পুলিশ সদস্য কারাগারে থাকলেও আসামি নোমান পলাতক।