বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক : সড়ক ও সেতুমন্ত্রীর ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই ও বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা তার অঞ্চলে ২৪ ঘণ্টা অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন। কোম্পানীগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে হরতালের নামে অবরোধ সৃষ্টি, বাস, সিএনজি চালিত অটোরিকশা ভাংচুর, লুটপাট ও চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে দোষীদের গ্রেপ্তারে প্রশাসনের প্রতি এ আল্টিমেটাম দেন তিনি।
আজ সোমবার সকাল ৯টায় বসুরহাট পৌরসভার জিরো পয়েন্টে বঙ্গবন্ধু চত্বরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ২৪ ঘণ্টা অবরোধের আল্টিমেটাম ঘোষণা করেন তিনি। বলেন, ‘গত কয়েকদিন যাবত হরতালের নামে অবরোধ সৃষ্টি করে কোম্পানীগঞ্জের বিভিন্নস্থানে বাস, সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ভাংচুর, লুটপাট ও চাঁদাবাজি করা হয়েছে। কোম্পানীগঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত এএসপি শামীম, কোম্পানীগঞ্জর থানার ওসি, ও ওসি (তদন্ত), ডিবির ওসি রবিউল সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এসব অরাজগতা সৃষ্টিকারীদের গ্রেপ্তার না করলে আগামী বুধবার সর্বাত্মক ২৪ ঘণ্টা অবরোধ থাকবে। এ সময় রিক্সা ছাড়া সকল ধরনের যানবাহন বন্ধ থাকবে। তবে দোকান-পাট, অফিস আদালত, ব্যাংক, বীমা খোলা থাকবে। কোম্পানীগঞ্জে কঠিন অবরোধ পালন করা হবে।’
এ ঘোষণা দেওয়ার পর সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে বসুরহাট পৌরসভার কার্যালয়ে নিজের ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে আসেন তিনি। ৫৫ মিনিট ব্যাপি লাইভে তিনি বলেন, ‘এখানে তথাকথিত এমপি একরাম, নিজামের লেলিয়ে দেওয়া সন্ত্রাসীরা তাণ্ডব চালাচ্ছে। শনিবার তারা ৪৮ ঘণ্টা হরতাল ডেকেছে। আমরা বাঁধা দেইনি। এখানে প্রশাসন আছে; তারা অর্থের বিনিময়ে আমাদের বিরুদ্ধে তাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তারা এ অর্থ একরাম চৌধুরী ও ফেনী এমপি নিজাম হাজারীর থেকে নিয়েছে। আমাদের কাছে তো এত টাকা নেই। সেতুমন্ত্রীর স্ত্রীর মতো ধণাঢ্য ব্যক্তি নেই যে, টাকা দিতে পারব।’
বসুরহাট মেয়র আরও বলেন, ‘হরতালের নামে অবরোধ সৃষ্টি করে তারা ১০টা গাড়ি ভাংচুর করেছে। ২০০ গাড়ি থেকে চাঁদাবাজি ও লুটপাট করেছে। প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করেছে। গত পরশু (শনিবার) টেকের বাজারে সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করেছে, গাড়ি ভেঙে দিয়েছে, কর্তব্যরত ম্যাজিস্ট্রেটকে অপমান করেছে। অপরাধীরা চিহ্ণিত। অথচ পুলিশ এখনও পর্যন্ত একজন অপরাধীকেও গ্রেপ্তার করে নাই।’
কাদের মির্জা বলেন, ‘আমাকে হত্যা করার জন্য কুত্তা রাহাত (ভাগিনা ফখরুল ইসলাম রাহাত) কোম্পানীগঞ্জ থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত এএসপি শামীমকে ১০ লাখ টাকা দিয়েছে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে ৫ লাখ টাকা দিয়েছে। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসিকে ৫ লাখ টাকা দিয়েছে, এসি ল্যান্ডকে ২ লাখ টাকা দিয়েছে, কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসিকে (তদন্ত) ২ লাখ টাকা দিয়েছে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাহাব উদ্দিন একজন অপদার্থ দালাল, চামচা, মেরুদণ্ডহীন প্রাণী, বাজে লোক। সে উপজেলা প্রশাসনের চামচামি করে। কোম্পানীগঞ্জে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য তিনিও দায়ী। একদিন জনগণের কাছে এর জবাব দিতে হবে।’
ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আরও বলেন, ‘সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কোনো যোগ্যতা নেই। তার মন্ত্রণালয় চালায় এডিশনাল চিফ ইঞ্জিনিয়ার সবুজ। সে সব নিয়ন্ত্রণ করে। মন্ত্রণালয়ের টাকা ৩ ভাগ হয়। একভাগ তারেক জিয়ার কাছে পাঠায়, এক ভাগের কথা পরে কমু, আরেক ভাগ পায় সরকারি কর্মকর্তারা। কোম্পানীগঞ্জের পুলিশ মানুষের সেবক নয়, তারা মানুষের বোঝা। এদেরকে এখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হোক। কোম্পানীগঞ্জের প্রতিটি ওয়ার্ডের আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নে কমিটি গঠন করতে হবে। আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, কোম্পানীগঞ্জে আর অস্ত্রবাজী করতে দেওয়া হবে না, চাঁদাবাজি করতে দেওয়া হবে না, রাস্তায় রাস্তায় ডাকাতি ও লুটপাট করতে দেওয়া হবে না, জীবন দেব তবুও এ এলাকার মানুষকে নিরাপত্তা দেব।’
নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরীকে ইঙ্গিত করে মির্জা বলেন, ‘যারা আমাদেরকে রাজাকারের সন্তান বলেছে, যারা ওবায়দুল কাদেরের গালে গালে জুতা মার বলে ঝাড়ু– মিছিল করেছে, যারা মদ খেয়ে ওবায়দুল কাদেরকে গালাগাল করেছে, যারা প্রশাসনকে নিয়ন্ত্র করে, যারা নোয়াখালীতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। যারা চাকরি বাণিজ্য করেছে, টেন্ডার বাণিজ্য করেছে, তারা যদি নেতা হয় সে দলে আমার মত লোকের থাকার দরকার নেই। ত্যাগী নেতারা ধ্বংস হয়ে গেছে, তারা আর নেই। আমার এসব কথা বলাতে কে নাখোশ হলো আমার কিছু যায় আসে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোম্পানীগঞ্জ ইউএনও ও এসি ল্যান্ড তোহা বাজার ইজারা দিয়ে মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, তোহা বাজার কী ইজারা হয়, অনেকে তোহা বাজারে ৪/৫ তলা বিল্ডিং করে বসবাস করেন। কোম্পানীগঞ্জের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আজম পাশা চৌধুরী, ভাগিনা ফখরুল ইসলাম রাহাত, চরএলাহী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কানা রাজ্জাক, মুছাপুর ইউনিয়নের তথাকথিত চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম শাহীন, চাপরাশিরহাটের রবিন্সসহ অনেকে লাখ লাখ একর জমি জবর দখল করে রাখে। ওই জমি ২-৩ হাজার টাকা করে নথি কিনে সোনাপুর, মাইজদী, চৌমুহনী, চৌদ্দগ্রাম, রামগতির লোকদের কাছ থেকে নথি বিক্রি করে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছে। রুমেলের কাছে ভূমিহীনরা ২৬ লাখ টাকা পাবে বলে ভূমিহীনরা অভিযোগ করেছে।’
লাইভের শেষে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা বলেন, ‘দেশে বিরোধী দল বলতে কিছু নেই, খালেদা জিয়া অসুস্থ ঘরে ঢুকে গেছেন, তারেক জিয়া দেশে নেই। তারেক জিয়া যে অপকর্ম করেছে জীবনেও দেশে আসতে পারবেন না। আমি নেত্রীর কাছে বলতে চাই দলে ভালো লোকগুলো এখন থেকে বাছাই করেন। আগামী নির্বাচনে তাদেরকে নমিনেশন দেন। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ২৭০টি আসন পাবে, যদি না পায় আমি হিজরত করব।’